Print

Rupantor Protidin

নাইক্ষ্যংছড়িতে বিজিবির মানবিক কার্যক্রম: ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও সহায়তা প্রদান

প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০২৫ , ৫:২৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২৫, ৫:২৪ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি বিওপিতে ১১ বিজিবির উদ্যোগে ব্যাপক মানবিক কার্যক্রম

সীমান্তে শুধু পাহারা নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই, ২০২৫) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) কর্তৃক জামছড়ি বিওপি এলাকায় আয়োজিত হলো সচেতনতামূলক সভা, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচি।

চিকিৎসা সেবা ও সচেতনতা:
দিনব্যাপী এই আয়োজনে স্থানীয় প্রায় ২০০ জন অসহায়, গরিব ও দুস্থ নারী-পুরুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করেন। একইসাথে, সীমান্তে মাদক, চোরাচালান, মাইন বিস্ফোরণ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় মাইন বিস্ফোরণে আহত ৬ জন ভুক্তভোগীর মাঝে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

ভুক্তভোগীদের কৃতজ্ঞতা:
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা গ্রহণকারী ময়না খাতুন (৭৬) বলেন, “আমার ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যা অনেকদিন ধরে। টাকা না থাকায় চিকিৎসা করতে পারছিলাম না। বিজিবির এই ক্যাম্পে চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়েছি, আল্লাহ তাঁদের মঙ্গল করুক।”

মাইন বিস্ফোরণে পা হারানো তরিকুল ইসলাম (২৬) বলেন, “যখন আহত হই, তখন কেউ পাশে ছিল না। বিজিবির এই সহায়তা অন্তত কিছুটা ভরসা দিয়েছে। এখনো অনেক কষ্ট হয়, তবে আজকে মনে হলো কেউ আছে পাশে।”

খাদ্য সহায়তা পাওয়া গৃহবধূ ছালেহা বেগম (৬৫) বলেন, “আমাদের এখানে আয়-রোজগারের তেমন সুযোগ নেই। আজকে যে চাল-ডাল-তেল দিল, সেটা দুই সপ্তাহ চলবে। বিজিবির জন্য দোয়া করি।”

বিজিবির অধিনায়কের বার্তা:
সচেতনতামূলক সভায় বক্তারা সীমান্তে মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। মিয়ানমার সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণের ঝুঁকি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়া জীবন ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বলেও সতর্ক করা হয়। সভায় স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণে সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার একটি ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকার গৃহীত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস কে এম কফিল উদ্দিন কায়েস। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক, অন্যান্য কর্মকর্তা, বিজিবি সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও জনসাধারণ।

অধিনায়ক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “শুধু সীমান্ত পাহারা নয়, আমরা মানবিক দায়িত্বও পালন করি। সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সদা প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।”

১১ বিজিবির এই মানবিক উদ্যোগ সীমান্তবাসীর মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছে। এটি আবারও প্রমাণ করলো যে, সীমান্ত রক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা একে অপরের পরিপূরক।