Print

Rupantor Protidin

১৭ বছর পর মুক্ত পরিবেশে বিএনপির সম্মেলন, পুনরায় সভাপতি হচ্ছেন বাচ্চু মোল্লা

প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২, ২০২৫ , ১০:২৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: জুলাই ২, ২০২৫, ১০:২৮ অপরাহ্ণ

রূপান্তর প্রতিদিন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ১৭ বছর পর মুক্ত পরিবেশে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পুলিশের বাধার মুখে মুক্তভাবে দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। আগামী ৫ জুলাই উপজেলা বিএনপির এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এত বছর পর এবার উন্মুক্তভাবে সম্মেলন আয়োজন করায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রথমবারের মতো সম্মেলনে গোপন ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। ফলে ৯৯৪ ভোটারের হাতে ঝুলছে আগামীর নেতৃত্ব। নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জানা যায়, বিগত ১৭ বছরে উপজেলা বিএনপি দুটি সম্মেলন করতে পারলেও তা ঘরোয়াভাবে এবং স্বল্প পরিসরে করতে হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত আহসানুল হক মোল্লার বাড়ির আঙিনায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পুলিশের বাধায় আর কোনো সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। ১০ বছর পর এবার দৌলতপুর মডেল কলেজ মাঠে বাধাহীনভাবে মুক্ত পরিবেশে হতে যাওয়া দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেন্দ্রের নির্দেশে সারাদেশের মতো এখানেও সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। অন্যদিকে সম্মেলন নিয়ে দলের একাংশের অশুভ তৎপরতাও বিদ্যমান রয়েছে বলে অনেকে জানাচ্ছেন।

এদিকে প্রয়াত আহসানুল হক মোল্লার জ্যেষ্ঠপুত্র সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা পুনরায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সভাপতি পদে একেবারেই দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বি সাবেক ছাত্রদল নেতা প্রয়াত সাগবর আলীর স্ত্রী ছাতা প্রতীকের সুরাইয়া আক্তার কাজলের কাছে চেয়ার প্রতীকে বাচ্চু মোল্লার জয়ের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার। এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। বাকি দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন কোন প্রার্থী জয়ী হয়ে নেতৃত্বে আসবেন তা নিয়ে উপজেলার সবখানে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে নানা সমীকরণ।

দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে অসম প্রতিদ্বন্দ্বি ছাড়া বাকি পদদুটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীরা সবাই বেশ শক্তিশালী। তারা কেউ কারো চেয়ে কম নন। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন, কষছেন জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ।

উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন চারজন। তারা হলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শহিদ সরকার মঙ্গল (আনারস), সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন (মই), যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা (ঘড়ি) ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলী (চাকা)।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদ হাসান মন্টি (মোমবাতি), উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক শের আলী সবুজ (মাছ), সাবেক ছাত্রদল নেতা রাশেদুল হক শামীম (মোটরসাইকেল), স্থানীয় বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ (ট্রাক), ফরজ উল্লাহ (ফুটবল), আতাউর রহমান (মোরগ), আবু সুফিয়ান অপু (হেলিকপ্টার), রাশেদ আহম্মেদ লালু (কাপ পিরিচ), সোহেল রানা (হরিণ) ও এসএম সালেক সিপার (টিউবওয়েল)।

উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে লাগানো হয়েছে প্রার্থীদের পোস্টার ও ফেস্টুন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও প্রার্থীদের পোস্টারে সয়লাব হয়ে উঠেছে। ভোটদানে প্রস্তুত রয়েছেন ৯৯৪জন ভোটার। তাদের ওপরেই নির্ভর করছে আগামীর নেতৃত্ব। তারা গোপন ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করবেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবারে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আকবর আলী বলেন, সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ইউনিয়নে ইউনিয়নে ঘুরছি। ভোটাররা সবাই আমাকে সমর্থন করছেন। অবশ্যই আমার জয় হবে, আমিই হবো দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক।

এর আগে উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনেও গোপন ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টিতেই উপজেলা বিএনপির কান্ডারি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করে ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। দলীয় সূত্র মতে, বাচ্চু মোল্লার পক্ষে অন্তত ৮০ শতাংশ নেতাকর্মীর পূর্ণাঙ্গ আস্থা ও সমর্থন রয়েছে। দলের ছোট একটি অংশের নেতৃত্বে থাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি আলতাফ হোসেন নিশ্চিত পরাজয়ের আশঙ্কায় এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেননি। তিনি অজনপ্রিয় হওয়ায় নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না এলেও সভাপতি পদে একজন দুর্বল প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যা অনেকের কাছে হাস্যকর হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন হাজি আলতাফ হোসেন।

দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের বিষয়ে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকা হাজি আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। এদিকে আর মাত্র দুদিন পর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন সফল করতে রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লার নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। এ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, সম্মেলনকে অসফল ও নেতৃত্ব নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এখানকার বিএনপির ক্ষুদ্র একটি গ্রুপ নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যদিও আমি তাদের কোনো রকম পাত্তা দেই না। তিনি বলেন, সারাদেশে নেতাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে কাউন্সিলে ভোটগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। গোপন এই ভোটের মাধ্যমে যারা জয়ী হয়ে আসবেন আগামীতে তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত কার্যক্রমে দলকে আরো শক্তিশালী করা হবে।