Print

Rupantor Protidin

শ্যামনগরে চেতনা নাশক স্প্রে করে দুই পরিবারে দুর্ধর্ষ ডাকাতি;১২ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন

প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২, ২০২৫ , ৩:৪২ অপরাহ্ণ | আপডেট: জুলাই ২, ২০২৫, ৩:৪২ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

স্বর্ণালংকার চুরি

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে রাতের আঁধারে চেতনানাশক স্প্রে করে দুটি পরিবারে দূর্ধ্বর্ষ ডাকাতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (০১ জুলাই) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে শ্যামনগর পৌরসভার বাদঘাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রামবাসী সূ্ত্রে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, বাদঘাটা আইসিএম কৃষি ক্লাবের সভাপতি ও প্রাক্তণ ইউপি সদস্য, বাদঘাটা গ্রামের মৃত হরেকৃষ্ণ মন্ডল এর পুত্র দেবীরঞ্জন মন্ডল (৬৫) ও তার কাকাতো ভাই মৃত প্রাণকৃষ্ণ মন্ডল এর পুত্র প্রাক্তণ ইউপি সদস্য চিত্তরঞ্জন মন্ডল (৬০) এর বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। পারিবারিকভাবে জানা যায়, প্রতিদিনকার ন্যায় রাতের খাবার শেষে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন।

তবে দেবীরঞ্জন মন্ডল এর কন্যা শিউলী মন্ডল (২৫) রাত্র সাড়ে ১১ টার দিকে তার স্বামী পলাশ মজুমদার (৩৫) এর সাথে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলারত অবস্থায় হঠ্যাৎ করেই গোঙাতে থাকে এবং বলেন তার মাথা ঘুরাচ্ছে । কিছুক্ষণ পরেই মাথা ঘুরানোর কথা বলতে না বলতেই হোত থেকে মোবাইল ফোন টা পড়ে যায়। ফোনকল চালু থাকা অবস্থায় শিউলীর প্রান্ত থেকে কোন কথা শুনতে না পেয়ে তার জামাই কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তাৎক্ষনিক তার শশুর দেবীরঞ্জন কে মোবাইল করেন।

শশুরের ফোনে কোন প্রকার সাড়া না পেয়ে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে সে তার বাসা থেকে দূরবর্তী ১ কিঃমিঃ এ অবস্থিত জামাই তার বাসা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হচ্ছিল। এমন সময় তার শালা, যে ঢাকায় পড়াশোনা করে, ঢাকা থেকে পলাশ মজুমদার কে ফোন করে এবং জানায় এইমাত্র তার সাথে তার বাবা দেবীরঞ্জন মন্ডল এর কথা হয়েছে। তারও নাকি মাথা ঘোরাচ্ছে চোখে ঝাপশা দেখছে। তখন দেবীরঞ্জন এর পুত্র ধৃতিমান মন্ডল তার জামাইবাবু পলাশ কে অনুরোধ করেন দ্রুত ডাক্তার নিয়ে তাদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য।

পলাশ মজুমদার বলেন, আমি বাড়ীতে এসে দেখি বাড়ীর গেইটে আগে থেকে যেমনভাবে তালা মারা ছিল, ঠিক তেমনভাবেই রয়েছে। তবে রুমের দরজা ভাঙা। আর পরিবারের সদস্যরা দেবীরঞ্জন মন্ডল, তার স্ত্রী শিখা রানী, কন্যা শিউলী মন্ডল, বোন সুমিত্রা রাণী সব অচেতন অবস্থায় রুমের মেঝেতে, খাটের উপরে পড়ে আছে।বাড়ীর দোতলায় যেয়ে দেখা গেছে, যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে তারা বিল্ডিং এর পিছনের গাছ বেয়ে উপরে উঠেছে।বাড়ীর টোটাল চাবি দুই সেট। একটা আমার কাছে আরেকটা আমার বউ শিউলীর কাছে থাকে। তবে শিউলীর কাছে চাবি পাওয়া যায়নি।

পরে পার্শ্ববর্তী পরিবার চিত্তরঞ্জন কাকার বাসায় যেয়ে তাদের মেঝেতে চাবিগুলো ফেলানো দেখতে পাই। আর সেখানে দেখিতে পাই চিত্তরঞ্জন মন্ডল ও তার স্ত্রী নিলীমা রাণী তারাও মেঝেতে পড়ে আছে। আর শিউলীর রুমের আলমারির ড্রয়ারটা আমার শশুরের রুমের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি। তথন আমি গ্রাম্য ডাক্তার মোঃ ফারুক হোসেন কে কল করি। সে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা করান এবং অনুমান করেন যে, কোন চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তার তখনকার মতো বিদায় নেন।

পরবর্তীতে আমি রাতের মতো সেখানে নির্ঘুম অবস্থায় রাত্রিযাপন করি।বুধবার (০২ জুলাই) সকাল ০৮ টায় তাদের শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখে এলাকাবাসীর পরামর্শে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে ঘটনাটি স্যোশাল মিডিয়ায় জানাজানি হলে শ্যামনগর থানা পুলিশের একটি তদন্তকারি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নথিভূক্ত করেন।

পলাশ মজুমদার বলেন, তাদের বাসা থেকে ২ ভরি ওজনের সোনার কানের দুল দুই জোড়া, ২ ভরি ওজনের সোনার পাটি হার ১ টি, ৪ ভরি ওজনের সোনার চেইন ৩টি, দেড় ভরি ওজনের সোনার আংটি ৪ টি এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে ।পার্শ্ববর্তী চিত্ত রঞ্জনের পরিবারে ২ জন সদস্যের অবস্থা বেশি খারাপ ও আশংকাজনক হওয়ায় তাদের বাসা থেকে কি কি ডাকাতি হয়েছে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবীর মোল্লা বলেন, ঘটনা শোনামাত্রই ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা তথ্য উদঘাটনের কাজ করছেন। যথোপযুক্ত প্রমাণাদি পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানানুগ প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এ বিষয়ে ভূক্তভোগী পরিবার থেকে কোন লিখিত অভিযোগ আমরা পায়নি।