ড্রোনে ধরা পড়ল অবৈধ মাছ শিকার
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার সময় স্মার্ট টহল দলের অভিযানে দুটি নৌকা, বিষের বোতল ও বিপুল পরিমাণ মাছ জব্দ করেছে বন বিভাগ। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাপসী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন বয়ারশিং খালের শিসা খাল এলাকায় গত বুধবার বিকেলে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, বনরক্ষীরা নিয়মিত স্মার্ট নজরদারির অংশ হিসেবে ওই এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে একটি সন্দেহজনক নৌকার গতিবিধি শনাক্ত করেন। এরপর পায়ে হেঁটে টহল দিয়ে শিসা খালের শেষপ্রান্তে পৌঁছালে তারা পরিত্যক্ত অবস্থায় মাছবোঝাই দুটি নৌকা এবং একটি ব্যবহৃত বিষের বোতল উদ্ধার করেন।
তিনি বলেন, আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে জেলেরা নৌকা ফেলে বনের গহীনে পালিয়ে যায়। তাদের চিহ্নিত ও আটক করার চেষ্টা চলছে। অভিযানে জব্দকৃত মাছ ও আলামত বন আইনে সংরক্ষিত হয়েছে এবং পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আরও জানান, সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরার প্রবণতা এখন ক্যান্সারের মতো একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এটি শুধু জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে না, খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলছে। বিষ প্রয়োগে পোকামাকড়, মাছ, পাখি এমনকি হরিণের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীও আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বন থেকে দু’একটা নৌকা আটক করেই এই অবৈধ অভ্যাস বন্ধ করা যাবে না। আসল সমস্যা হচ্ছে দাদনদার ও আড়তদারদের হাত থেকে বিষ সরবরাহ। যারা কার্টুন কার্টুন বিষ মজুদ করে এবং জেলেদের মাধ্যমে তা বন এলাকায় পাঠায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই বাজারে থাকা মাছ ল্যাব টেস্ট করে উৎস চিহ্নিত করে এই চক্রের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
সুন্দরবন রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট টহল সিস্টেম’ চালু হওয়ায় বন বিভাগের সক্ষমতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ড্রোন, জিপিএস, বডি ক্যামেরা ও ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সাহায্যে এখন বনের দূর্গম এলাকায়ও নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে।
ডিএফও বলেন, আমরা চাই, বন সংরক্ষণে স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা বাড়ুক। তারা যাতে বুঝতে পারেন, বন ধ্বংস মানে নিজেদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস। শুধুমাত্র আইন দিয়ে নয়, সচেতনতা ও সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই টেকসই সমাধান সম্ভব।
পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা সংগঠনগুলো এ ধরণের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলছে, সুন্দরবনের প্রতিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় অবৈধ মাছ শিকার ও বিষ প্রয়োগ বন্ধ করা জরুরি।
তারা মনে করেন, জেলেদের বিকল্প জীবিকায় সহায়তা, বাজার পর্যায়ে বিষমুক্ত মাছ নিশ্চিতকরণ ও দাদন প্রথার সংস্কার ছাড়া এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়।
সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল। এটিকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।