Print

Rupantor Protidin

ঈদ পরবর্তী মণিরামপুর হাসপাতাল বহির্বিভাগে রোগী আছে চিকিৎসক নেই

প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১১, ২০২৫ , ৯:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: জুন ১১, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

ঘড়ির কাঁটা তখন বুধবার সকাল ১০টা বেজে ৬ মিনিট। মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে টিকিট কেটে চিকিৎসকের অপেক্ষায় অর্ধশত রোগী। চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় করে দীর্ঘ অপেক্ষা। কিন্তু কক্ষে নেই কোন চিকিৎসক।

হাসপাতালে নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও। তিনি তখনও কর্মস্থলে এসে পৌঁছাননি। পাওয়া যায়নি আবাসিক মেডিকেল অফিসারকেও।

অনেকে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকাল ৮ টায় এসে দুই ঘন্টারও বেশি সময় চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। বয়স্ক রোগীদের কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে বসে পড়েছেন চিকিৎসকের কক্ষের দরজায়।

বুধবার বেলা ১০টার পর সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভবনের নিচ তলার ১১৬ নম্বর কক্ষের দরজায় ২০-২৫ জন রোগী টিকিট হাতে অপেক্ষা করছেন। ভিতরে চিকিৎসকের দুটো চেয়ার খালি। ১১৮ নম্বর কক্ষ দন্ত বিভাগে দরজা বন্ধ। ভিতরে চিকিৎসকের চেয়ার ফাঁকা। চেয়ারের উপর পা তুলে আরাম করছেন চিকিৎসকের সহকারী আব্দুর রউফ। খালি পড়ে আছে ১১৯ নম্বর কক্ষের দুইজন চিকিৎসকের চেয়ারও। আর নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসকের চেয়ার ফাঁকা। পাশের চেয়ারে একজন নারী সহকারী রোগী দেখছেন। শিশু ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর পাশাপাশি রোগী দেখছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ইফতেখার রসুল।

রোগীরা বলছেন, চিকিৎসক কক্ষে না থাকার এমন চিত্র মনিরামপুর হাসপাতালে নতুন নয়। এই হাসপাতালে কোন সেবা নেই। চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীরা সেবা নিতে এসে ফিরে যান খালি হাতে। সকালে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তার পাওয়া যায়না।

মরিয়ম বেগম নামে এক বৃদ্ধা রোগী বলেন, সকাল আটটার দিকে আইছি। ১০টা পার হয়ে গেছে। ডাক্তার আসেনি। দাঁড়াতি না পেরে ডাক্তারের কক্ষের দরজার সামনে বসে পড়েছি।

আব্দুল খালেক বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ৮টারও আগে আইছি। ডাক্তার দেখাতি পারি নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র বলছে, ঈদুল আজহার পর গত সোমবার থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা। গত দুই দিন রোগীর চাপ কম থাকলেও বেড়েছে বুধবার থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই দিন কর্মস্থলে আসেননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল। এই দুই দিন বহির্বিভাগে চিকিৎসকের উপস্থিতির চিত্রও ছিল বুধবারের মত।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমি নাইট করেছি। তিন জন হিন্দু চিকিৎসক ঈদের বন্ধে ডিউটি করেছেন। তারা এখন ছুটিতে আছেন। আজ বহির্বিভাগে ১১৬ নম্বর কক্ষে ডা. নাহিদ হাসান রোগী দেখের কথা ছিল।
তবে সকাল পৌনে ১১ টা পর্যন্ত ১১৬ নম্বর কক্ষের বাইরে রোগীর দীর্ঘ লাইন থাকলেও ভিতরে ডাক্তার নাহিদ হাসানকে পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে জানতে ডাক্তার নাহিদ হাসানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের প্রধান ডা. ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বেলা সাড়ে ১০টায় বলেন, আমি হাসপাতালের কাছাকাছি এসে গেছি। বহির্বিভাগে চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।

এদিকে হাসপাতালের একটি সূত্রটি বলছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমেদ যোগদানের পর থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার কাজ চলছে অনেকটা দায়সারা ভাবে। তিনি হাসপাতালের আরএমও হুমায়ুন রশিদের উপর ভরকরে হাসপাতাল চালাচ্ছেন। কোন চিকিৎসক কাজে যোগ দিয়েছেন কে কাজে যোগ দেননি, রোগীরা কেমন সেবা পাচ্ছেন এসবের কোন খবর রাখেন না তিনি। তিনি হাসপাতালে এসে বিভিন্ন সভা মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন।