জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বিলুপ্ত ঘোষণার প্রতিবাদে বেনাপোল কাস্টমসে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা ৩ ঘন্টা কলমবিরতি পালন করেছে। এসময় বেনাপোল বন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। বন্দর থেকে মালামাল খালাস বন্ধ ছিল।
বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত চলে কর্মবিরতী।
বেনাপোল সিঅ্যন্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, সকালে কাস্টমসের পক্ষ থেকে প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় কলমবিরতির ব্যানার। সকাল ৯ টায় অফিসের কার্যক্রম শুরু হলেও কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে ১০ টার পর টেবিলে দেখা যায়নি। শুল্ক ভবনের ছয় তলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছিল।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, দুপুর ১ টার কাস্টমসের কর্মবিরতি শেষে বেনাপোল বন্দর দিয়েরআমদানি,রফতানি বানিজ্য ও পণ্য খালাস কার্যক্রম পুরনায় শুরু হয়েছে।
এদিকে এ আন্দোলন কর্মসূচির ব্যাপারে কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তা মিডিয়ার সামনে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান নয়। রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির কারণ সম্পর্কে জাতি অবহিত নহে। এমতাবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত না করে রাজস্ব সংস্কারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম, যেমন টেকসই রাজস্বনীতি প্রণয়ন, রাজস্ব বিষয়ক আইনসমূহ প্রয়োজনীয় সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও অটোমেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির পক্ষে যুক্তি দিয়ে
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর আদায় বাড়াতে কর কাঠামো সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে দুই স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে গতরাতে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এমন বড় ধরনের একটি কাঠামোগত সংস্কারের উদ্দেশ্য ও কারণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে সরকার।
সরকার জানিয়েছে, নতুন এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা থেকে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রমকে পৃথক করার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমানো এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ। গত ৫০ বছরের বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এশিয়ার সবচেয়ে কম কর-জিডিপি অনুপাতের মধ্যে একটি। বিশ্বব্যাপী এ অনুপাত গড়ে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এ অনুপাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।
জনগণের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে এ উন্নীত করতে হবে বলে সরকার মনে করে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এনবিআর পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতি প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার জন্য একটি একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়—এ ধরনের ব্যবস্থা স্বার্থের দ্বন্দ্ব (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) তৈরি করে। এটি ধীরগতিসম্পন্ন ও অদক্ষতা বাড়ায়। বছরের পর বছর ধরে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন যে, বিদ্যমান নীতিমালাগুলো প্রায়ই ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চেয়ে রাজস্ব সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।