Print

Rupantor Protidin

অনিয়মতান্ত্রিকভাবে জিসিবি কলেজকে পরীক্ষা কেন্দ্র করার পায়ঁতারার অভিযোগ

প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৪, ২০২৫ , ৮:৪৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

যশোরের চৌগাছা জিসিবি আদর্শ কলেজে অনিয়মতান্ত্রিক এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র করার পায়ঁতারার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছায়ে নতুন কেন্দ্রের তালিকায় জিসিবি আদর্শ কলেজের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। যার ফলে, যশোরের শিক্ষক সমাজ ও সচেতন মহল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার জিসিবি আদর্শ কলেজ উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে চাঁদপাড়া গ্রামে অবস্থিত। জিসিবি কলেজের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কাটগড়া ডাক্তার সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোন কলেজের নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র পেতে নূন্যতম ১০০ জন পরীক্ষার্থী থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয়ন শিক্ষাবোর্ডে জমা দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শহর বা শহরতলীর কাছাকাছি হতে হবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী জিসিবি কলেজে ১০০ জনের অনেক কম পরীক্ষার্থী রয়েছে। পরীক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৬০ জন। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরীক্ষা কেন্দ্র করার বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডে জিসিবি কলেজের কোন প্রত্যয়নও দেননি। অভিযোগ উঠেছে, কাটগড়া ডাক্তার সাইফুল ইসলাম কলেজ কেন্দ্রে প্রতি বছরই এইচএসসি পরীক্ষায় রমরমা নকল উৎসব চলে।

সেই কেন্দ্রে জিসিবি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। কাটগড়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে উপ-কেন্দ্র বানিয়ে কাটগড়া কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। উপ-কেন্দ্রটি মূল কেন্দ্র দ্বারা পরিচালিত হয়। মূল কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাটগড়া ডাক্তার সাইফুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ বলয় চন্দ্র পাল সব দায়িত্ব পালন করেন। সেই সূত্রে কাটগড়ার অধ্যক্ষ বলয় চন্দ্র পালের সাথে জিসিবির অধ্যক্ষ আবু জাফরের অত্যান্ত নিবিড় সম্পর্ক। কাটগড়া কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নকল দেয়ার অপরাধে কয়েক বছর আগে এক শিক্ষকের জেলও হয়েছিল। একাধিকবার কয়েকজন শিক্ষক প্রকাশ্যে নকলসহ বহিষ্কার হয়েছেন।

কাটগড়া কলেজ কেন্দ্র থেকে কোন শিক্ষার্থী ফেল করে না। কেন্দ্র হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রে অংশ নেয়া কাটগড়া কলেজ, জিসিবি কলেজ ও যাদবপুর কলেজের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে আসছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে জিসিবির পরীক্ষা কেন্দ্র করার জন্য দুই কলেজের অধ্যক্ষ উঠেপড়ে লেগেছেন। জিসিবি কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র হলে কাটগড়া কলেজে ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। তাদের অসাধুপায় অবলম্বনে কোন ধরণের সমস্যা হবে না।

জিসিবিকে কেন্দ্র দেয়ার জন্য শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ামত ইলাহী সহযোগিতা করছেন। তিনি কেন্দ্র করার জন্য জিসিবির নাম উপস্থাপন করেছেন। জিসিবির অধ্যক্ষ আবু জাফরের বোনের জামাতা উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়ামত ইলাহী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অধ্যক্ষ বলেন, গ্রামের লোকজনে বলে যেদিন থেকে বেগুনতলায় হাট হবে বুঝতে হবে কিয়ামত আর বেশিদিন বাকি নেই। এই কথার সাথে জিসিবি কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র করার প্রস্তাবটি হুবাহু মিলে যাচ্ছে। কোন আইনে সেখানে পরীক্ষা কেন্দ্র দেয়া হচ্ছে তা কোন সচেতন মানুষের কাছে বধগম্য নয়। জিসিবি কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র হলে পরীক্ষা নিয়ে নিছক তামাশা হবে।

শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়ামত ইলাহী বলেন, জিসিবি কলেজে ১০০ জন পরীক্ষার্থী নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরীক্ষা কেন্দ্র করার জন্য প্রত্যয়নও দেননি বিষয়টি সঠিক। কাটগড়া ডাক্তার সাইফুল ইসলাম কলেজের উপ-কেন্দ্র বাতিল করার জন্য মূলত জিসিবিকে কেন্দ্র করার প্রাথমিক প্রস্তাব আনা হয়েছে।

জিসিবিতে পরীক্ষা কেন্দ্র হলে কাটগড়ার শিক্ষার্থীরা সেখানে পরীক্ষা দেবে। কাটগড়ার অনিয়ম চিরতরে বন্ধ হবে। পরীক্ষা কেন্দ্র দেয়ার মালিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। আমার কিছুই করার নেই।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন বলেন, জিসিবিতে পরীক্ষা কেন্দ্র করা হলে কাটগড়া ডাক্তার সাইফুল ইসলাম কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে সুবিধা হবে। সেইজন্য জিসিবিকে প্রাথমিকভাবে নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র করার প্রস্তাব আনা হয়েছে। তারপরও যদি ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ না চায় তাহলে জিসিবিকে পরীক্ষা কেন্দ্র দেয়া হবে না।