Print

Rupantor Protidin

যশোরের প্রেমবাগ ইউপি

অবৈধভাবে প্যানেল তৈরি করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা

প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৩, ২০২৫ , ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

Sheikh Kiron

যশোরের অভয়নগরে প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের প্যানেল অবৈধভাবে ভেঙে নতুন প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নিতে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নতুনভাবে তৈরি করা চেয়ারম্যানের প্যানেলের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ জসিম উদ্দীন ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি ওই ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওই ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।

প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম বৈঠকে ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আমিনুর রহমানকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জসিম উদ্দীনকে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিমা পারভীনকে প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ নির্বাচিত করা হয়। গত ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আমিনুর রহমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

গত ১৯ আগস্ট সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। এতে ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানদের অথবা প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যেকোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রাখতে বলা হয়।

প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, গত ২২ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নতুন চেয়ারম্যানের প্যানেল তৈরি করা হয়। সভায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দীনকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আমিনুর রহমানকে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিমা পারভীনকে প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ নির্বাচিত করা হয়। সভায় মো. আমিনুর রহমান প্যানেল চেয়ারম্যান-১–এর দায়িত্ব মো. জসিম উদ্দীনকে অর্পণ করেন। সভার তিন দিন পর গত ২৫ আগস্ট অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ থেকে পদত্যাগের আবেদন করেন আমিনুর রহমান। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি তাঁর শারীরিক ও পরিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেন।

এরপর গত ২৮ অক্টোবর যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম নতুন করে তৈরি করা প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ জসিম উদ্দীনকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করেন।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯–এ বলা হয়েছে, পরিষদ গঠিত হওয়ার পর প্রথম অনুষ্ঠিত সভার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সদস্যরা তাদের নিজেদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকারক্রমে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি চেয়ারম্যানের প্যানেল নিবার্চন করবেন। অনুপস্থিতি, অসুস্থতা হেতু বা অন্য যেকোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানের প্যানেল থেকে অগ্রাধিকারক্রমে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের প্যানেলভুক্ত সদস্যরা অযোগ্য হলে অথবা ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে নতুন চেয়ারম্যানের প্যানেল তৈরি করা যাবে।

অনুপস্থিতি, অসুস্থতা হেতু বা অন্য যেকোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানের প্যানেল থেকে অগ্রাধিকারক্রমে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের প্যানেলভুক্ত সদস্যরা অযোগ্য হলে অথবা ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে নতুন চেয়ারম্যানের প্যানেল তৈরি করা যাবে।

আমিনুর রহমান বলেন, ‘২২ আগস্ট পরিষদে আমার সভাপতিত্বে মিটিং দেখানো হলেও আমি মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না। ২২ আগস্ট সকালে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমাকে ফোন করে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে নিষেধ করেন। ২৫ আগস্ট বিকেলে আমি পাশের গ্রাম থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় চৌকিদার আমাকে পরিষদের মিটিংয়ের সভাপতিত্ব করার রেজল্যুশন, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ থেকে পদত্যাগপত্র এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের পত্রে সই করতে বলেন। প্রথমে আমি সই করতে রাজি না হওয়ায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমাকে ফোন করে সই করতে বলেন। ভয়ে আমি সব কাগজপত্রে সই করে দিয়েছি। আমি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং আমার কোনো পরিবারিক সমস্যা নেই।’

এ সম্পর্কে জসিম উদ্দীন বলেন, ‘৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১–ও হারিয়ে গেলেন। আমরা সব মেম্বার (ইউপি সদস্য) বসে ২২ আগস্ট প্যানেল চেয়ারম্যান-১–কে পরিষদের মিটিংয়ে আমন্ত্রণ জানালাম। সব মেম্বার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আমিনুর রহমান মিটিংয়ে আসতে পারেননি। তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিটিংয়ের রেজল্যুশনে সই করে দিয়েছেন। তবে ২৫ আগস্টের মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেদিন তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেন।’

অবৈধভাবে চেয়ারম্যানের প্যানেল ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে জসিম উদ্দীন বলেন, ‘বোঝা না-বোঝার কারণে ইউনিয়নের পরিষদের মিটিংয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান পুনর্গঠন, রেজল্যুশন, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ থেকে আমিনুর রহমানের পদত্যাগ এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের তারিখ হেরফের হয়েছে। তবে এতে অন্য কোনো কারণ নেই। এখন ইউনিয়ন পরিষদে কোনো সমস্যা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের সব কার্যক্রম সুন্দরভাবে পারিচালিত হচ্ছে।’

এ সম্পর্কে যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যান-১–কে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু প্যানেল চেয়ারম্যান-১ পদত্যাগ করায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২–কে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যানের প্যানেল ভেঙে দিয়ে নতুন করে চেয়ারম্যানের প্যানেল তৈরি করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’