কুমিল্লার মুরাদনগরে দিনভর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার পর পৃথক দুই জায়গায় বিএনপি ও এনসিপির জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নের হায়দারাবাদ সামসুল হক কলেজ মাঠে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।
অপরদিকে একই সময়ে পার্শ্ববর্তী আন্দিকুট ইউনিয়ন পীর কাশিমপুর হাইস্কুল মাঠে জনসভা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন মাস্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনসভা দুটিতে শনিবার দুপুর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এর আগে কয়েকদিন ধরে জনসভা সফল করতে দুই দলের পক্ষ থেকে পোস্টার, লিফলেট ও মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়।
বিএনপি জনসভায় এনসিপির লোকজন আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতা কায়কোবাদ বলেন, ‘এনসিপি যদি সুন্দর নির্বাচন চায়, আমি নিজেই মঞ্চে তাদের জায়গা করে দেবো।
কিন্তু আজ তারা আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ছাত্ররা আমাদের তাজ। কিন্তু কিছু ছাত্র নামধারী আজ আমাদের সমাজকে কলুষিত করতে চায়। ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন আমাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছিল, এনসিপির লোকজন তার লোকজনের সঙ্গেই জোট বেঁধেছে।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আমাদের গর্ব, আমাদের কলিজার টুকরা। ছাত্রদের পড়াশোনা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মুরাদনগরবাসী আপনারা জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, দেশে যেন একটি সুন্দর নির্বাচন হয়।’
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের সভাপতিত্বে বিএনপির জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন- কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিক আহমেদ মীর।
এনসিপির পাল্টা জনসভা
অপরদিকে একই সময়ে জনসভা করেছে এনসিপি।
বিএনপির জনসভাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলার পীর কাশিমপুর হাইস্কুল মাঠে গতকাল শনিবার একই সময় জনসভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা শাখা এনসিপির আয়োজনে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের (আকবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক)। তবে জনসভার ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে তার নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত সভায় যোগ দেননি তিনি। এনসিপির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সমাজসেবক গোলাম কিবরিয়া সরকার।
তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত সংস্কার এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে। যেসব দাবিতে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছেন, সেসব দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত এবং মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করতে করা ছাড়া কোনো নির্বাচন কাম্য নয়।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির বাঙ্গরা বাজার থানার সভাপতি মো. কামরুল হাসান কেনালের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন এম এ জাহের মুন্সি, অ্যাডভোকেট উবাইদুল হক সিদ্দিকী, ছাত্র সমন্বয়ক এনামুল হক আসিফসহ আরো অনেকে।
জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় চাঁদা আদায়ে বাধা দেওয়ায় স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হকের ওপর হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসলে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় ছাত্রনেতা আবু ফয়সাল ও পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর থেকে মুরাদনগরে বিএনপি ও এনসিপি নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
মুরাদনগরের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একই দিনে একই সময়ে পাশাপাশি ইউনিয়নে বিএনপি ও এনসিপি জনসভা না করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে করতে পারতেন। এতে দুই দলের মধ্যে একটি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রথম অবস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই দলের জনসভা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল। শনিবার শান্তিপূর্ণভাবে দুই দল জনসভা করেছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা জনসভাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। এ ছাড়াও সহকারী পুলিশ সুপার মো.কামরুজ্জামান স্যার নিজে উপস্থিত ছিলেন।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান শনিবার রাত ১০টার দিকে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দুই দলের কেউ অনুমতি নেননি। এসব জনসভার অনুমতি নিতে হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সেখান থেকে নিয়েছে কিনা তা জানি না। তবে দুই দলের জনসভা শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে।’