Print

Rupantor Protidin

এনআইডি সংশোধনে অন্তহীন বিড়ম্বনা

চট্টগ্রামে ঝুলে আছে ৫০ হাজার আবেদন

প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৬, ২০২৫ , ৮:৩৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ৮:৩৭ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

ভোটার আইডি কার্ডে স্বামীর নাম সংশোধন করতে দুই বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের বারান্দায় ঘুরছেন চট্টগ্রামের মিরসাইয়ের বাসিন্দা পারজিনা আক্তার। তার স্বামীর নাম গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু ভোটার আইডি কার্ডে আছে সিরাজুদৌল্লাহ গিয়াস উদ্দিন। সব কাগজপত্র ঠিক করে অনলাইনে আবেদন করলেও এখনও তিনি সংশোধিত আইডি কার্ড হাতে পাননি। আবেদনে কোনো ভুল আছে কিনা সেটিও তাকে জানানো হয়নি।

গতকাল পারজিনা আক্তার বলেন, নামের ভুল ঠিক করতে অনলাইনে আবেদন করার পর তারা বলেছিল ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু সংশোধিত এনআইডি কার্ড দুই বছরেও পাইনি। এর মধ্যে স্থানীয় এক দালালকে টাকাও দিয়েছি। উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তিন দিন আগে সেখানে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, এখন সংশোধনের কাজ করা হচ্ছে না; । মনে হচ্ছে জীবনের বাকি সময় এই ভুল সংশোধন করতে কেটে যাবে। এমন হয়রানিতে অতিষ্ঠ পারজিনার মতো চট্টগ্রামের অসংখ্য গ্রাহক।

তাদের দাবি, আবেদন প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলেও নাগরিকরা এর সুফল ঠিকমতো পাচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলের কারণে দিনের পর দিন বিভিন্ন জেলা, বিভাগীয় ও প্রধান কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন নাগরিকরা। কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে ছোট ভুল-ত্রুটি সংশোধন করতে পারলেও অধিকাংশ গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ নেই। এসব ভুলের কারণে কারও চাকরি হচ্ছে না, কেউ বেতন-পেনশন পাচ্ছেন না, কারও পাসপোর্ট ও ভিসা হচ্ছে না। এনআইডি সংশোধন না হওয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর সার্কিট হাউসে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ ক্ষোভের মুখে পড়েন একাধিক আবেদনকারীর। সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা পেয়ারা বেগমের এনআইডি কার্ডে পিতার নাম দেলোয়ার হোসেনের জায়গায় দেলোয়ার বেগম হয়ে গেছে। সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলেও তাকে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে বলেন। পেয়ারা বেগম বলেন, পিতার নাম কীভাবে বেগম হয়? এটা তো কমনসেন্সের বিষয়। তারা ভুল করে এখন হয়রানি করছে আমাদের।

পটিয়ার রাসেল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, এনআইডিতে তার মায়ের নামের স্থানে স্ত্রীর নাম উঠেছে। এটা সংশোধনের জন্য তিনি কয়েক বছর আগে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও তার কোনো সুরাহা হয়নি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অধীনে বর্তমানে ৫০ হাজারের মতো এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আবেদনে মাসের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তারা সংশোধিত আইডি কার্ড পচ্ছেন না। এর জন্য নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের অবহেলাকে দুষছেন তারা।

চট্টগ্রাম অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরির সংশোধনের জন্য প্রতিদিন অজস্র আবেদন জমা হয়। আমার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলার (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি)। আমার কাছে ২০ হাজারের মতো সংশোধনের আবেদন জমা আছে। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাহেদ আক্তার বলেন, কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে কোনো নাগরিককে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। তবে অনেকেই সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয় না। তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।