Print

Rupantor Protidin

চট্টগ্রামের লুটের অস্ত্র উদ্ধারে পুকুরে জালে মিলল পুলিশের দুটি বাইক

প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ৬, ২০২৪ , ৭:৫৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২৪, ৭:৫৫ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নগরীর পাহাড়তলী থানা লুট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে সাগরিকা বিটাক মোড় এলাকার ব্রাহ্মণ পুকুরে জেলেদের সহায়তায় জাল ফেলে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

আজ বুধবার দুপুরে পাহাড়তলী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ছয় সাতজনের একটি জেলের দল পুকুরের চার কোণে জাল টেনে প্রায় দুই ঘন্টা অস্ত্রের সন্ধানে চেষ্টা চালায়। তবে সেখান থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। পুকুর থেকে পুলিশের ব্যবহৃত পুড়িয়ে দেওয়া দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সন্ধ্যার দিকে নগরের আকবরশাহ ইস্পাহানি পাহাড়ের জঙ্গলের ভিতর মাটি খুঁড়ে থানা থেকে লুট হওয়া একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, পাহাড়তলী থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার এক আসামিকে ভোরবেলা গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি পুকুরে জাল ফেলে তল্লাশি করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুকুরে তল্লাশি করে অস্ত্র পাওয়া যায়নি। অভিযানে পুলিশের ব্যবহৃত দুটি পোড়ানো মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ভাঙচুরের পর সেগুলো পুকুরে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এসময় তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে তার অন্যতম সহযোগী নুরনবীসহ আরো অনেকের নাম বলে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নুরনবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক ইস্পাহানী পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে একটি নাইন এম এম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার উত্তর কাট্টলী বাসা থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিফর্ম এবং পুলিশের ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল ভোরে পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকা মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড়তলী থানা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আসামি মো. মাহাবুর রহমানকে (২৭) গ্রেফতার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় গত ৫ আগস্ট পাহাড়তলী থানা অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে সে ও তার সহযোগী ৬-৭ জন জড়িত ছিল।

এসময় আসামি মো. মাহাবুর রহমানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়তলী থানাধীন কর্নেলজোন্স রোড়ের শেষ মাথা মোবারক আলীর বসতঘরে আসামি মাহাবুর রহমানের ভাড়াঘরের ভিতর অভিযান চালিয়ে পাহাড়তলী থানার পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত এক সেট ইউনিফর্ম (ক্যাপসহ), পুলিশের ব্যবহৃত ২টি হাতঘড়ি, পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত ৫টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট, পুলিশের ব্যবহৃত এক জোড়া কেডস ও এক জোড়া সিভিল স্যু, পুলিশ লোগো সম্বলিত একটি ছাতা, একটি ট্রাউজার, একটি ইলেকট্রিক কেটলি, দুটি চশমা, পুলিশের ব্যবহৃত একটি রেইনকোট উদ্ধার করা হয়।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, পাহাড়তলী থানার লুটকৃত অস্ত্র ও কয়েকটি মোটরসাইকেল পাহাড়তলী থানাধীন বিটাক বাজার কলেজ রোডসংলগ্ন পুকুরে এবং কয়েকটি সরকারি ওয়াকিটকি সেট ও কয়েকটি হ্যান্ড ক্যাপ অন্যত্র ফেলে দেয়। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেলা পৌনে ১২টায় বিটাক বাজার সংলগ্ন কলেজ রোড পুকুরে ছয়-সাতজনের জেলেদের একটি দলকে দিয়ে দুই ঘন্টাব্যাপী জাল ফেলে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। পুকুরে জাল ফেলে পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত ২টি পোড়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে মো. মাহাবুর রহমানকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে কয়েকজন সহযোগীর নাম জানায়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগী নুরনবীকে (২৫) গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিকাল সাড়ে ৩টায় আকবরশাহ থানাধীন রেলওয়ে হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর উভয় আসামিকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় আকবরশাহ্ধসঢ়;‌ থানাধীন ফারুক চৌধুরীর মাঠের পশ্চিম পাশের ২ নং লেইনের শেষ মাথায় অবস্থিত ইস্পাহানি পাহাড়ের জঙ্গলের ভিতর মাটি খুঁড়ে একটি পিস্তল চাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে সিএমপি পশ্চিম বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সহকারি পুলিশ কমিশনার মো. মঈনুর রহমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বাবুল আজাদ থানার ফোর্স নিয়ে ইস্পাহানি পাহাড়ের জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পাহাড়তলী থানা থেকে লুণ্ঠিত একটি ৯ এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।