Print

Rupantor Protidin

জেলা প্রশাসক বারাবর অভিযোগ কাজে আসেনি

নড়াইলে কেডিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪ , ৯:৩১ অপরাহ্ণ | আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ৯:৩১ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

নড়াইল সদরের কেডিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহন দাসের বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় ১২ জন শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া উঠেছে। স্কুল উন্নয়নের নামে নিয়োগ বাণিজ্যের এই বড় অংকের টাকা প্রধান শিক্ষক মোহন দাস, নড়াইলের সাবেক এমপি মাশরাফির পিতা গোলাম মোর্তজা স্বপন, তৎকালীন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুলতান মাহমুদ ও ম্যানেজিং কমিটি ভাগাভাগি করে নেয়। ৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্কুল উন্নয়নের নামে তাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ১৫ লাখ টাকা করে এবং ৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ১২ লাখ টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করে। নিয়োগ বিধি সব ঠিকঠাক রেখে যোগ্যদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষক ও কর্মচারদের নিয়োগ দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দালাল খ্যাত প্রধান শিক্ষক মোহন দাস শুধু নিয়োগ বাণিজ্য করেননি, এমপিও করার নাম করেও নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের প্রতি জনের কাছ থেকে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন। ভুয়া শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা তৈরি করে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি’র লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন মহা দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক মোহন দাস। স্কুলে কম্পিউটার ও মনিটর কেনার জন্য সরকারিভাবে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া যায়। সেখানে ৯০ হাজারের মধ্যে কম্পিউটার ও মনিটর কিনে বাকি টাকা হজম করেন প্রধান শিক্ষক মোহন দাস। লাইব্রেরীয়ান শিক্ষক নিয়োগেও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। মোটা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে এ পদে গিয়াস উদ্দিন উজ্জ্বল নামে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার লাইব্রেরিয়ান পাশের সনদ জাল হলেও কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থায় নিশ্চুপ রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক মোহন দাস বিশেষ সুবিধা নিয়ে সেলিম রেজা নামে একজন শিক্ষককে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার সুযোগ দেন। ইতিপূর্বে সেলিম রেজা একই সাথে কেডিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং কালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি করতেন। বিষয়টি জানাজানির পর সেলিম রেজা কালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরি ছেড়ে দেন। স্কুল মাঠ ভরাটের জন্য টিআরের চাল বরাদ্দ আসলেও কাজ না করে তা আত্মসাৎ করা হয়। মাইজপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জসিম মোল্যা স্কুলের গেট নির্মাণের জন্য ৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। গেট নির্মাণের পেছনে ১ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রধান শিক্ষক বাকি ৪ লাখ টাকা বেমালুম হজম করেন। স্কুলে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুন:মির্লনী অনুষ্ঠানের নামে বিনা রশিদে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। যার সিংহভাগ টাকা প্রধান শিক্ষক মোহন দাস লোপাট করেন।

কেডিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র কালুখালী গ্রামের রাজিবুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক মোহন দাস শিক্ষক নিয়োগে ১৫ লাখ এবং কর্মচারী নিয়োগে ১২ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রুহুল আমিন এসব অনিয়ম- দুর্নীতি নিয়ে ২০২২ সালের ২৭ জুন নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খেয়া ঘাটের মাঝির ছেলে মোহন দাস প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরি পাওয়ার পর কোটি টাকা ব্যয়ে নড়াইলে আলীশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। শিক্ষকতা ছাড়া তার আর কোনো বৈধ আয়ের উৎস নেই। এলাকাবাসী জানান, সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোহন দাস জানান, স্কুলের সকল নিয়োগ সরকারি বিধি অনুযায়ী হয়েছে।

তার সম্পদ ও বাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এগুলো তার একার নয় তিনি ও তার শালিকা শেয়ারে করেছেন।