Print

Rupantor Protidin

কালের গর্ভে বিলীন হওয়া জিনিসপত্র রেখেছে শাহাজান

প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৯, ২০২৪ , ৮:১৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ৮:১৪ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার জীবনযাপনে নিয়ে এসেছে পরিবর্তন। আধুনিক যুগের ছোঁয়াতে জীবন বদলে দেওয়ার এই জাদুর কাঠির সঙ্গে হারিয়ে গেছে জীবন ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা অনেক জিনিসপত্র ও মুদ্রা। আশি বা নব্বই দশকে যে যন্ত্রগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়া ছিল, একবিংশ শতাব্দীতে সবই কালের গর্ভে বিলীন।

একদিকে দেশের আধুনিকতায় পরিবর্তন অন্যদিকে হারিয়ে ফেলা দেশের ও সভ্যতার ইতিহাস। এখন আর রেডিও নিয়ে কেউ খবর শোনার অপেক্ষায় থাকে না, সন্ধ্যা হতেই গ্রামে গ্রামে হারিকেন জ্বলে না, ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয় না হেমন্তের ধান ভানার উৎসব, লাঙ্গল নিয়ে পরিবারের কেউ মাঠে যায় না, পানীয় পান করার জন্য রূপা বা তামার পাত্র ব্যবহার করে না ও কাসার থালাই ভাত খেতেও দেখা যায় না।

প্রাচীনকালের ঐতিহ্যের নিদর্শন আধুনিক যুগের সাক্ষী হিসাবে নিজের শখের জন্য এগুলো সংগ্রহ করে রেখেছেন যশোরের শার্শা উপজেলার ছোট নিজামপুর গ্রামের পার্টস মেকানী শাহাজান কবির।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহাজান কবির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছোট ঘরে প্রায় দেড় থেকে দু’শ রকমের প্রাচীনকালের ঐতিহ্যেবাহী মানুষের ব্যবহারিক বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে দিয়েছেন। যা প্রথমে দেখলে ছোট একটি জাদুঘর মনে হতে পারে। সেখানেই রাখা আছে শত বছরের পুরাতন রূপার ঘঁটি (পানি পানে ব্যবহৃত) কাঁসার থালা, কাঁসার বদনা, অর্ধশত বছর আগের রেডিও, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম চারটি ধাতব মুদ্রা প্রচলন করা হয়। এগুলো হচ্ছে পাঁচ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা এবং ৫০ পয়সা এর পরের বছর ১৯৭৪ সালে আরেকটি নতুন মুদ্রা সংযোজিত হয় যার মূল্যমান ছিল এক পয়সা, পাকিস্তান শাসন আমলের ১’শত টাকার নোটসহ বিভিন্ন কাগজের মুদ্রা। এছাড়াও প্রায় দেড় থেকে দু’শত রকমের পুরাতন জিনিসপত্র নিয়ে সাজানো নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

শাহাজান কবির বলেন, আধুনিক যুগে প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশের ঐতিহ্য ভূলে যাচ্ছে মানুষ। সেই ভূলে যাওয়াটা সংগ্রহ বা তরুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই প্রাচীন কালের এই ইতিহাত বা সাক্ষী। শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রাচীন ও বর্তমান সমাজের মানুষের জীবনযাপনের পার্থক্য গুলো তুলে ধরছে তিনি। তিনি আরও জানান, সমাজের সকলেই আসুক এই ধরনের কালের গর্ভে বিলীন গুলো তার মাধ্যমে ছড়িয়ে যাক দেশের মানুষের মাঝে। তিনি এগুলো সংগ্রহ করতে যেমন অনেক অর্থ ব্যয় করেছে তেমনি এর পিছনে আছে অনেক পরিশ্রম। তিলে তিলে গড়ে তোলা শাহাজান এই সংগ্রহ করা জিনিসগুলো এক নজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসে। তবে এলাকাবাসী শাহাজানকে নিয়ে গর্ববোধ করছে কাছের মাধ্যমে।

এলাকাবাসীরা জানান, সভ্যতার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি । এই যান্ত্রিকতার কারণে হারাতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা জিনিস। এটা বাংলার সভ্যতা পরিবর্তন হচ্ছে। এখন যা দেখা যাচ্ছে হইতো আগামী প্রজন্মে আরও উন্নত কিছু দেখবে। আগামী প্রজন্ম যা দেখবে তার পরের প্রজন্ম হইতো তাদের থেকেও উন্নত কিছু দেখবে। কিন্তু এগুলো সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শাহাজান কবিরের এই মহৎ উদ্যোগ অব্যশই প্রশংসনীয়।

দেখতে আসা কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, বইয়ের পাতায় আশি বা নব্বই দশকের বিভিন্ন চিত্র বা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আলোচনা বা পড়েছি তবে আধুনিক যুগে এসেও বাস্তব দেখার সৌভাগ্য হবে এটা কখনোই কল্পনাও ছিলো না। দারুন একটি অনূভুতি জাগ্রত হচ্ছে। মনে হচ্ছে বর্তমান যুগের চেয়ে ঐ সময়ের মানুষ খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। তাছাড়া প্রচুর পরিশ্রমী ছিলেন বলেন ধারনা হচ্ছে।