Print

Rupantor Protidin

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর ১৫০ সাম্পান মাঝি বন্যার্তদের সাহায্য করতে গিয়ে বিপাকে

প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৫, ২০২৪ , ৬:৩৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ৬:৩৬ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, ফেনী ও কুমিল্লার আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির মানবিক বিপর্যয় দেখে বানভাসি মানুষকে বাঁচাতে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে কর্ণফুলীর বিভিন্ন ঘাট থেকে যাওয়া দেড় শতাধিক সাম্পান মাঝিরা চরম বিপাকে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত তিন দিন ধরে মো. শাহাজাহান, মো. ওসমানসহ শত শত সাম্পান মাঝিদের সাথে পরিবার ও সংগঠনের নেতাদের যোগাযোগ বন্ধ। তবে বিভিন্ন সূত্রে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝিদের নেতাকর্মীরা খবর পেয়েছেন, সাম্পানসহ মাঝিদের ফেলে অনেকেই চলে গেছেন। পানি ও খাদ্যহীন অসহায় ভাবে সাম্পান মাঝিরা আটকে পড়েছেন ফটিকছড়ি, ফেনী ও আশেপাশের এলাকায়।

এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন ও ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতি সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, বাংলাবাজার ঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি লোকমান দয়াল ও চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল।

যদিও গত ২২ আগস্ট থেকে বন্যা দুর্গত এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে ছুটে গিয়েছে নানা স্বেচ্ছাসেবীরা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে তা বড় ট্রলি ও ট্রাকে করে নিয়ে গেছেন দুর্গত এলাকায়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফান্ড তুলে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্যার্তদের মাঝে।

এদিকে সাম্পান ঘাট সূত্রে জানা গেছে, সাম্পান ও ছোট নৌকা গুলো মাঝিসহ নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন ভাড়ায় নিয়ে গেছেন। ৩ দিনে ভাড়া ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। এতে এক নৌকায় থাকবে দুই মাঝি। তাঁদের থাকা-খাওয়া ব্যবস্থা করবে স্ব স্ব সংগঠন।
কর্ণফুলীর সাম্পান সমিতির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বন্যার্তদের জন্য সারা দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মানবিক বিবেচনায় বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের জীবন বাঁচাতে গেয়ে কর্ণফুলীর শত শত সাম্পান ও মাঝিরা আটকে পড়ে বিপদে পড়বে তা ভাবিনি। কেননা, লোকজন হঠাৎ করে নৌকা ও মাঝিদের বিভিন্ন কৌশলে বন্যাস্থলে নিয়ে গেছেন।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, মূলত সমস্যা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ কার্যক্রম ও খন্ডকালিন উদ্ধার কাজ শেষে যে যার মতো নৌকা/সাম্পান রেখে চলে যাচ্ছেন। ফলে, সাম্পান মাঝিরা পড়েছে বিপাকে। তাঁরা এত বড় নৌকা রেখে আসতেও পারছেন না। আবার ভালো ভাবে খাবার পানিও পাচ্ছেন না। মানবিক বিপর্যয়ে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেরাই এখন বিপাকে পড়েছেন।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী বলেন, ‘মাঝিদের জীবন ও তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হলো সাম্পান ও নৌকা। সুতরাং এসব সাম্পান ও মাঝিদের রক্ষার জন্য আমরা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির এই সভাপতি আরও বলেন, ‘ফটিকছড়ি থেকে ১১টি মতো নৌকা মাঝিসহ আজ রাতে ফিরে এসেছে। কিন্তু ফেনীর লালপুল ও ধনোয়া এলাকায় আমাদের অনেক সাম্পান আটকে পড়েছে। ওখানে যাঁরা আছেন। তাঁদের কারো সাথে আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। ফোনে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে আমরা তাঁদের উদ্ধারে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি কুইক রেসপন্স টিম যাচ্ছি। মাঝি পরিবারদের আতঙ্কিত বা উদ্ধিগ্ন হবার কোন কারণ নেই। সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

নির্ভরশীল আরেকটি সূত্র জানায়, কর্ণফুলীর ১৯টির অধিক ঘাটে ৩ শতাধিক ইঞ্জিন চালিত সাম্পান রয়েছে। ওখান থেকে কে কিভাবে কোন শর্তে কোনদিকে বন্যাস্থলে সাম্পান নিয়ে গেছে তার কোন সঠিক তথ্য নেই। এমনকি কর্ণফুলীর কতটি সাম্পান ফেনীতে আটকে পড়েছে তাও বলা কঠিন। এমনও ঘটনা শোনা যাচ্ছে, মাঝিদের জিম্মি করে নৌকা নিয়ে অন্যের বাড়ি বা দোকানে লুটপাট করার চেষ্টা হচ্ছে। এমন খবরও রটেছে। এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে অবিরাম চেষ্টা চলছে। যদিও এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না।

ওদিকে, ছাত্র-জনতা বিভিন্ন ফান্ড থেকে ইতোমধ্যে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের কাজ করছেন। নানা ধরনের শুকনো খাবার দাবারের পাশাপাশি নৌকাসহ জীবনরক্ষাকারী নানা সামগ্রী নিয়ে অনেকেই ছুটেছেন ফেনী, কুমিল্লা বা নোয়াখালীর বন্যাদুর্গত এলাকায়। কর্ণফুলী নদীতে চলাচলকারী অধিকাংশ সাম্পান, নৌকা ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গত অঞ্চলে।

নগরীর অভয়মিত্র ঘাটের চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির নেতাদের দাবি, ইতোমধ্যে ১৫০টি সাম্পান ফেনীসহ বিভিন্ন জায়গায় গেছে। সাম্পান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক হিসেবে। আবার তিন দিনে ৭-৮ হাজার টাকায়। মাঝিরঘাট ট্রাক চালকদের দাবি, তাঁরা ট্রাক ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৯ হাজার টাকা করে। যেহেতু মানবিক কাজে সহযোগিতার সময় এটি।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মুছা আলম জানান, তাঁদের পক্ষ থেকে চারটি বোট এর মধ্যে ফেনীতে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে কর্ণফুলীর শত শত সাম্পান মাঝি বিপাকে পড়েছে তা কেউ জানায়নি। তবুও খোঁজ নিয়ে প্রশাসনিক ভাবে যোগাযোগ করে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’