সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অবৈধভাবে’ ভারতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করেছে বিজিবি। শুক্রবার রাতে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতে পালানোর সময় সঙ্গে করে ৬০-৭০ লাখ টাকা, ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলাদেশি পাসপোর্ট, কিছু ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যাচ্ছিলেন।
গ্রেপ্তারের তাকে বিজিবি ক্যাম্পে হেফাজতে রেখে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পরবর্তীতে তাকে রাত ১২টা নাগাদ ক্যাম্প থেকে থানার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সাবেক বিচারপতি মানিককে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিন।
নাজিম উদ্দিন বলেন, গতরাতে (শুক্রবার) এক ব্যক্তি তাকে টেলিফোন করে জানান যে অপরিচিত একজন লোক বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাচ্ছে। তখন বিষয়টি স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি। বিচারপতি মানিক যে স্থান থেকে আটক হয়েছিলেন, ওই জায়গাটায় পাহাড়ি জঙ্গল আছে। ভারতীয় সীমান্তে খাসিয়াদের গ্রাম। বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে আধা কিলোমিটারের মতো এলাকায় জঙ্গল রয়েছে। খাসিয়াদের গ্রাম পার হলেই বড় সড়কের দেখা মেলে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মানিককে দেখেন। তখন তিনি কলাপাতার ওপর শুয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানীয়রা মানিকের পরিচয় সম্পর্কে জানতেন না। তারা বুঝতে পারেন এই ব্যক্তি স্থানীয় বাসিন্দা নয় এবং তিনি অবৈধভাবে ভারতে যাবার জন্য অপেক্ষা করছেন। একজন ব্যক্তির পালানোর খবরে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন তিনি কলা পাতার ওপরে শুয়ে আছেন। এরপর তাকে ধরে কিছু প্রশ্ন করেন বিজিবি সদস্যরা। সেইসব জিজ্ঞাসাবাদের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে।
ওই ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখেছে যে সেগুলো শুক্রবার রাতেরই। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন বিজিবি সদস্য তাকে জিজ্ঞেস করছে, আপনার বাড়ি কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন যে মুন্সিগঞ্জ। এরপর নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার নাম বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক। তখনই ওই বিজিবি সদস্যকে বিদ্রুপ করে বলতে শোনা যায়, বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক? ওই মানিককা… যে কয়দিন আগে চ্যানেল আইতে এক উপস্থাপককে…ই…করছো… তখন মানিক নিজেই বলেন সেই উপস্থাপকের কাছে তিনি পরে ক্ষমা চেয়েছেন।
এরপর এক পর্যায়ে তিনি তার বাবার নাম বলেন- মরহুম আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তার কাছে তখন জানতে চাওয়া হয় যে তিনি কেন ভারতে পালাচ্ছেন? তার উত্তরে তিনি বলেন, ভয়ে পালাইতেছি…প্রশাসনের ভয়ে। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় যে তিনি ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পালানোর সময় তার সঙ্গে ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলাদেশি পাসপোর্ট, টাকা, কিছু ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ছিল। কিন্তু যাদের সহায়তায় তিনি পালাচ্ছিলেন, তারা তার কাছে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে নিয়েছে এবং তাকে তারা সীমান্তের ওপারে নিয়ে মেরেছে।