শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ তথ্য মতে, প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটন সরাসরি নেতৃত্ব দেন। এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে গেলে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন বটতলা এলাকায় পৌঁছালে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া ২০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের সাভারের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে উক্ত হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন আহত হন।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাত ১০টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হামলায় ঘটনার বিচার দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। একটি সূত্র জানায় সেখানেও ছাত্রলীগ হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের সাভারের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বটতলা এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু প্রমুখ। এছাড়া বাকিদের নাম পরিচয় পাওয়া যায় ।
আহত শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করা হয়েছে। তারা আমাদের হত্যাচেষ্টা করেছে। আমাদের কাদার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে। এলোপাতাড়ি লাথি দিয়েছে। দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে জখম করেছে।’
হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের হামলা করিনি। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তাঁরা ক্যাম্পাসে বাইরে থেকে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের এনে আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।’ এদিকে হামলার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। তারা ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ঢুকে যান। এ সময় হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইট, পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। অন্যদিকে হলের সামনে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ছাত্রলীগকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’