দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষে। বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর দুই শতাংশ হারে বাল্যবিবাহ কমছে। তবে এই গতিতে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ২১৫ বছর লেগে যাবে।
গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
ঢাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বুধবার এই অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশে ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লখুস। তার মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে বাল্যবিবাহ নির্মূলের চেষ্টা এখনকার চেয়ে ২২ গুণ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে এখন বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশ।
এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান ডিডাব্লিউকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। তবে আমাদের আরো সর্বাত্মকভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের মাত্র ১০ জেলায় অ্যাকশন টু এনড চাইল্ড ম্যারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে সব কিছু সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা দরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ের হার ২০০৬ সালে ৬৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৫২ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৫১ শতাংশ ছিল। তাদের হিসাবে দেশে এখন চার কোটি ১৫ লাখ মেয়ে ও নারী বিবাহিত এবং সন্তানের মা। গত ১০ বছরে বাল্যবিবাহ কমার যে হার দেখা যাচ্ছে, সে হার দ্বিগুণ হলেও ২০৩০ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার হবে প্রায় ৩০ শতাংশ।
২০৫০ সালের মধ্যে এ হার ১৫ শতাংশের নিচে নামবে। দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার প্রায় ৪২ শতাংশ। ১৫ বছরের কম বয়সীদের বাল্যবিবাহের হার ৮ শতাংশ। বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০২২ অনুসারে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশ। এ হার আফগানিস্তানে ৩৫, ভারতে ২৭, পাকিস্তানে ২১, নেপালে ১০ ও শ্রীলঙ্কায় চার শতাংশ।
বাল্যবিবাহ রোধে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করার বিকল্প নেই। ওই অনুষ্ঠানে এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর বক্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি তাঁর বড় বোনের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে মা–বাবাকে রাজি করিয়েছেন। এ রকম আরও অনেক তরুণ এগিয়ে এলে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক জাগরণ তৈরি হবে।
বাল্যবিবাহ রোধ আন্দোলনটি শুরু হতে হবে পরিবার থেকেই। কোনো অভিভাবক যাতে ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারেন, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, কাজি, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে যাঁরা আইনভঙ্গ করে বাল্যবিবাহ দেবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বাল্যবিবাহের কারণে এলাকায় কেউ শাস্তি পেলে অন্যরা এই কাজ করতে সাহস পাবেন না।
আশা করি, সরকার বাল্যবিবাহ রোধে ২১৫ বছর অপেক্ষা করবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে না পারলেও অন্তত তারা ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে, তার মধ্যে দেশকে বাল্যবিবাহমুক্ত করুক।