মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনযাত্রা খাদের কিনারায় পৌঁছে গেলেও এ পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি হচ্ছে না। কোনো কারণ ছাড়াই ক্রমাগত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সম্প্রতি বেড়েছে জ্বালানি তেল ও পানির দামও। রোববার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯-১০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা শ্রীলংকার চেয়েও বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা উল্লেখ করে বক্তারা জানান, সরকার নিত্যপণ্যের শুল্ক কমালেও এর সুফল পাচ্ছেন কেবল একশ্রেণির ব্যবসায়ী। সরকারের অতিরিক্ত ঋণের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা।
মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সব মহলে বারবার আলোচিত হলেও কেন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না, তা এক রহস্য। সরকারের সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির পরও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাজার নজরদারি ব্যবস্থায় দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, যা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ। সরকার অনেক সময় নিত্যপণ্যের শুল্ক কমিয়ে দিলেও ভোক্তাশ্রেণি এর সুফল পাচ্ছে না। সব মিলে সমাজে ধনী ও গরিবের বৈষম্য এখন চোখে পড়ার মতো। পরিস্থিতি এমন যে, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তার আয়ের প্রায় সবটুকু খাদ্যের পেছনে ব্যয় করেও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড় আয় বাড়তে দেখা গেলেও আদতে তা ধনীদের তথা উচ্চ আয় যারা করেন, তাদের কারণে হয়েছে। উলটো বৈষম্য বৃদ্ধির ফলে গরিব মানুষের আয় আরও কমেছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা খাতে ব্যয় সংকুলানের স্বার্থে সরকার কর্তৃক অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়া, রাজস্ব আদায়ের হার ও পরিধি বৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদের হারে অস্বাভাবিকতা, অর্থ পাচার, ডলারের লাগামহীন মূল্যের জের জিডিপিসহ সবখানেই বিদ্যমান। সব মিলে আগামী বাজেটেও বিষয়গুলো যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তা বলাই যায়।
সরকার ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ফ্ল্যাট নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পেও উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, যা এ লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। ভোগ-চাহিদা কমানোর জন্য বেসরকারি খাতের জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ঋণের সুদহার বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে এসব খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। একই সঙ্গে সংকটময় পরিস্থিতিতে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এভাবে যাচ্ছেতাই সরকারি ব্যয় ও বাজার ব্যবস্থার সংস্কার করা না গেলে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।