রিমালে উপকূল বিপর্যস্ত
প্রবল শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টার পরই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। রাত ১২টার পর জোয়ারের পানির সঙ্গে বাড়ে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব।
জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলাগুলো। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত গোটা উপকূলের জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত করেছে। বিশেষ করে যেসব উপকূল অঞ্চলে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে কিংবা যেসব দ্বীপে বেড়িবাঁধ নেই, সেখানকার ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত ও মাছের ঘের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যৃর খরব পাওয়া গেছে। এদিকে আবহাওয়া ভালো হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো প্রয়োজন।
যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সুদীর্ঘ উপকূলের জনজীবন সমতল ভূমি থেকে অনেকটা স্বতন্ত্র। উপকূল জীবন যেমন সমুদ্র উপকূলের কারণে আকর্ষণীয়, তেমনি ঝড়ঝঞ্ঝা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে গত ১৭ বছরে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল।
সিডর, ইয়াস, আইলা, মহাসেন, বুলবুল, মিগযাউম, মিধিলি, ফণী, সিত্রাং, মোরা, মোখা ও আম্ফানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি উপকূলবাসী। প্রাণহানির পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও ফসলসহ অর্থনৈতিকভাবেও ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলের মানুষ। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে তো বটেই, বড় বড় দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন তারা। শুধু ক্ষতি পোষাণোর লড়াইয়েই জীবন কাটে তাদের। আর এসব ঘূর্ণিঝড় বেশির ভাগই আছড়ে পড়েছে মে-জুনে। তাই এই মাস এলেই তাদের আতঙ্ক বেড়ে যায়। এর মধ্যে রেমাল নামে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টিও মে মাসেই আঘাত হানল। এ সময় বিপর্যস্ত উপকূলের জনজীবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ক্ষেত্রে কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও এনজিওর সহায়তা নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতদরিদ্র মানুষগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের নড়বড়ে ঘর ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে যায়, জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়।
ঘরে যে সামান্য খাদ্যসামগ্রী থাকে, তাও অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও পুনর্বাসনের সময় এদেরই অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পর সরকারকে পুনর্বাসনের প্রতিও নজর দিতে হবে। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর যাতে দুর্গত এলাকায় রোগব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। অনেক চিংড়িঘের ও শস্যক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেদিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে।
এ অবস্থায় উপকূলে জোরেশোরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় এমন কিছু করতে হবে, যাতে অধিকসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আগামীতে সরকারের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। রেমালে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব বেশি। যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সবার আগে সহায়তা দিতে হবে।