Print

Rupantor Protidin

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিমানের কিছু উদ্যোগ

প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২৪ , ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: মে ২৮, ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

Sheikh Kiron

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিমান পরিবহণের শুভ সূচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের সঙ্গে সংগতি রেখে এবং তার সার্বিক দিকনির্দেশনায় বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

বিমানের সব কার্যক্রমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার সমন্বয়, যাত্রীসেবা, ফ্লাইট অপারেশন ও সার্বিক এয়ারলাইন্স পরিচালনার গুণগত মান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ‘স্মার্ট এয়ারলাইন্স’ করার পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। স্মার্ট টিকিটিং সিস্টেম-কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইন্স রিজার্ভেশন সিস্টেম, Sabre PSS বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীর টিকিট ক্রয় থেকে শুরু করে যাত্রার সমাপ্তির সব কার্যক্রম যুগোপযোগী ও যাত্রীবান্ধব হয়েছে।

বিমানের ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, কল সেন্টার, বিমান সেলস সেন্টার, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিসহ (OTA) সব DS/ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সম্মানিত যাত্রীরা বিমানের যে কোনো ফ্লাইটের সময়সূচি ও প্রাপ্যতা যাচাই, পছন্দের আসন বুকিং ও ক্রয় করা এবং ওয়েব চেক-ইন করতে পারেন। এছাড়া রয়েছে বিমানের গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ।

স্মার্ট টিকিটিং সিস্টেম : কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইন্স রিজার্ভেশন সিস্টেম, Sabre PSS বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে একজন যাত্রীর টিকেট ক্রয় থেকে শুরূ করে যাত্রার সমাপ্তির সকল কার্যক্রম যুগোপযোগী ও যাত্রীবান্ধব হয়েছে। বিমানের ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, কল সেন্টার, বিমান সেলস সেন্টার, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (OTA) সহ সকল GDS / ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সম্মানীত যাত্রীগণ বিমানের যেকোন ফ্লাইটের সময়সূচী ও প্রাপ্যতা যাচাই, পছন্দের আসন বুকিং ও ক্রয় করা এবং ওয়েব চেক-ইন করতে পারেন।

ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট সিস্টেম: ৩৪টি ব্যাংকিং চ্যানেলের Visa/Master/Amex, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, আই-ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে ঘরে বসে Website এবং Call Center এর মাধ্যমে টিকেট ক্রয় করা যায়। এছাড়াও ক্রয়কৃত টিকেটের তারিখ পরিবর্তন ও অতিরিক্ত ব্যাগেজ অ্যালাউন্স ক্রয় করা যায়। এছাড়াও IATA Financial System এর মাধ্যমে যাত্রীগণ বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টিকেট ক্রয় করতে পারেন। বিমান IATA এর স্মার্ট উদ্যোগ ব্যবহার করে প্রযু্ক্তি ইকোসিস্টেম (BSP, ICCAS, CASS, ICH, IBCS, ASD, ARC সিস্টেম) এর মাধ্যমে ক্রয়কৃত টিকেটের পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে থাকে। যা VERDI সিস্টেমের মাধ্যমে অটোমেটেড অডিট করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশন এর সফল বাস্তবায়নঃ ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশন এর সফল বাস্তবায়ন করে বিমান ‘National Carrier’ হিসেবে বাংলাদেশ এভিয়েশন ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিমানে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় IATA Billing Settlement System (BSP), IATA Currency Clearance System (ICCS), Cargo Accounting Settlement System (CASS), IATA Clearing House (ICH), IATA BSP Consulter System (IBCS), Air Desk Seminar (ADS) এবং Airline Reporting Corporation (ARC) দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যান্য স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সময়ে সঠিক উড়োজাহাজ নির্ধারণ, ডেটানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দক্ষ অপারেশন এবং গ্রাহকের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণে বিমান IATA এর Direct Data Solution(DDS) চালু করেছে। Direct Data Solution(DDS) সিস্টেমের Big Data টেকনোলজি ব্যবহার করে তথ্য-উপাত্ত এর সাহায্যে মার্কেট রিসার্চ করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত দ্রুত ও সঠিকভাবে নেয়া সম্ভব হচ্ছে।

স্মার্ট ব্যাক অফিস: বর্তমানে বিমানের Back Office-এর প্রকৃতি data processing-এর জন্য RAPID, Cargo Data Processing-এর জন্য Cargo Spot System দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া Routine Performance Evaluate করার নিমিত্তে Finess FPS System-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাপনাকে লাভজনক রুট চিহ্নিতকরণসহ রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এ ছাড়া Cargo Handling সেবার বিলিং পদ্ধতি ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে Fineness MBS System ব্যবহার করে ICH বিলিং কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। বিশ্বের স্বনামধন্য Acceleya Company-এর Revenue MST System Air RM ব্যবহার করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসহ যাত্রীপ্রতি রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বুকিংয়ের সব ধরনের অনিয়ম রোধকল্পে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এজেন্ট কর্তৃক টিকিট ভাড়া কম দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিমানের আর্থিক ক্ষতি বন্ধে বিশ্বের স্বনামধন্য IATA Strategic Partner Accelya হতে VERDI নামক সিস্টেম, যা Sales Audit (BIDT) এ যুগান্তকারী সিস্টেম। সিস্টেমটি এ পর্যন্ত টিকিটের আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রায় ইউএসডি ৩.০০ মিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় করেছে।

ডিজিটাল ট্রেনিং ও উন্নয়ন: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল ট্রেনিং প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মীরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: কর্মীদের দক্ষতা মূল্যায়ন এবং উন্নয়নের জন্য একটি ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা কর্মীদের প্রফেশনাল গ্রোথ নিশ্চিত করবে।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবেশবান্ধব এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য নতুন প্রজন্মের ফুয়েল-এফিশিয়েন্ট এয়ারক্রাফটের ব্যবহার এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ। কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য বিভিন্ন গ্রিন অপারেশনাল প্র্যাকটিস চালু করা, যেমন কাগজহীন অফিস, ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার।

ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন প্রজন্মের এয়ারক্রাফটগুলোতে উন্নত ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (IFE) ইনস্টল করা হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট অভিজ্ঞতাকে আরও মনোরম করে তোলে।

রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা চালু করেছে। যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থান এবং সময়সূচি সহজেই ট্র্যাক করতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজ করে তোলে। এ ছাড়া স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম, মোবাইল ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, সামাজিক দায়বদ্ধতা, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, উন্নত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবার মতো নানা ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে অভূতপূর্ব।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বাজেটে বিমানের জন্য কোনো বরাদ্দ থাকে না। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা। সংস্থাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করেছে এবং লাভের ধারা বজায় রেখে সরকারের লাভজনক কোম্পানিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রেখেছে। পাশাপাশি বিমানের নিজস্ব আয় থেকে বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলোর কিস্তি পরিশোধসহ লিজে থাকা কয়েকটি উড়োজাহাজও ক্রয় করেছে, যা বিমানের আর্থিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। দূরদর্শী পরিচালনা-পর্ষদ, নির্বাহী পরিচালকরা, দক্ষ ও কর্মঠ জনবল, আধুনিক উড়োজাহাজ, ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে সংস্থাটি হয়ে উঠেছে যাত্রীবান্ধব ও স্মার্ট এয়ারলাইন্স।