আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট একটি সংবেদনশীল পটভূমিতে আসতে যাচ্ছে। দেশে ২০২২ সালে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জটি শুরু হয়। এর তৃতীয় বছরে এসেও অনেক জায়গায় সে সংকটের ব্যাপ্তি রয়েছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে, ১৮-১৯ মাস ধরে আমদানিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আসন্ন বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
বর্তমানে প্রধান তিনটি সংকট হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বাজেট বড় হলে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।
অন্যদিকে বিদেশে সফরকালীন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী চেম্বার সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তবু বাস্তবতা এই যে, সরকারের বহুমুখী আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। দেশীয় বিনিয়োগও হচ্ছে না তেমন। দেশে বিনিয়োগের বাধা তথা অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিষয়। ব্যবসায়ের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের উচ্চসুদের হার। শিল্প ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ বাড়তে পারে।
পাশাপাশি সহজে ব্যবসা করার সূচক বর্তমানের ১৬৮তম অবস্থান থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০তম করতে ইচ্ছুক সরকার। দেশে তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি কমে আসবে ঋণ খেলাপীর সংখ্যাও।
সরকার এটি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ মুনাফা বা ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্পঋণের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের বর্তমানে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া ঋণ নেয়ার সময় প্রক্রিয়াকরণ ফিসসহ আরও যেসব ফি নেয়া হয়, তাতে এ হার ২০-২২ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোন কোন ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরও বেশি সুদ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদ বা বিনিয়োগের মুনাফার হার নমনীয়-সহনীয় হওয়া মানেই তা হবে ব্যবসাবান্ধব।
এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার কমানো সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষেই সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ। দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে ইতোমধ্যে। সবিশেষ জোর দিতে হবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ সৃষ্টির ওপর।