Print

Rupantor Protidin

সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আতঙ্কে উপকূলবাসী

প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৬, ২০২৪ , ৬:৫৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: মে ২৬, ২০২৪, ৭:১৩ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে সাতক্ষীরায় উপকূলবর্তী শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জে হালকা বৃষ্টির সাথে দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে উপকূলীয় এলাকার অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদ—নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আতঙ্কে রয়েছে উপকূলবাসী। বিশেষ ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উপকূলের মানুষ। আগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে গৃহহারা হয়ে পাউবো’র বেড়িবাঁধ অথবা উচু কোন স্থানে টোং ঘর বেধে বসবাসকারি লোকেরা ফের বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয়রা।

আশাশুনি প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পাউবো’র বেড়িবাঁধ মেরামতে শনিবার রাতে আলো জ্বালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মাটির কাজ করেছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের ভাঙ্গন রোধে রোববার সাকাল থেকে নৌকায় করে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জিও রোল পাটানো হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, রবিবার সকালে উপকূলের নদ—নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। শনিবার থেকে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদী এখন পর্যন্ত উত্তাল রূপ ধারণ করেনি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সকালে ঘোলা ত্রীমোহনী, ঝাপালি, নওয়াবেঁকী, পাখিমারা ও নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকায় মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে। তারা আরো জানান, সকাল থেকে হালকা বৃষ্টির সাথে দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। যেন তেন ভাবে সংষ্কার করা পাউবো’র এই বেড়িবাঁধ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে যেকোন মূহুর্ত্বে ভেঙে যেতে পারে।

পাউবো’র ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের বেড়িবাঁধ টেকসই না। শুধুমাত্র বাঁধ ভেঙে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসে দেখে চলে যায়। পরে ঠিকাদার নিয়োগ করে দায়সারা গোছের কাজ করে চলে যান। কিছুদিন পর বাঁধ ভেঙে আবার আগের অবস্থা ফিরে আসে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় না।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নুর বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিতে ১০৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে এবং প্রায় ১৩ হাজার উপকুলবাসি আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। উপকূীয় এলাকায় সকাল থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে চাল বরাদ্ধ দিয়েছি। সেই সাথে শুকনা খাবার, মেডিকেল টিম, খাওয়ার পানি মজুদ রাখা হয়েছে।

একই সাথে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ—২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, তার বিভাগের আওতাধীন ১৫ এর অধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। এই মুহুর্ত্বে ৫/৬টি পয়েন্টে কাজ চলছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও জিও রোল মজুদত রয়েছে। এখন আমরা ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্টে বেড়িবাঁধে জিও রোলের কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো পয়েন্টে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

শ্যামনগর এলাকার প্রদীপ মন্ডল আলফাত হোসেন মেহেদী মারূফ সহ অনেকে জানান, রবিবার সকালে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বেশি হয়েছে। পূর্ব সতর্কতা থাকায় পাশ্ববর্তী খোলপেটুয়া, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীসমুহের জেলেরা শনিবার মাছ ধরতে নামেনি। এছাড়া সাগর ও সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন।আরো জানান,শ্যামনগর উপজেলার ১২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝড়ের প্রভাবে নদীতে পানির চাপ বাড়লেই বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শংকায় দিন কাটছে উপকূলবাসীর।বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, কৈখালী, রমজাননগর, কাশিমাড়ি ও আটুলিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধের বেশকিছু পয়েন্ট অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, ঝড়ের নাম শুনলেই আমাদের এলাকার মানুষের প্রাণ কেঁপে ওঠে। প্রায় প্রতিবছরই জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে এখানকার মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়। তবে পাউবো যে বাঁধ নির্মাণ করে, তা কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে যায়। সাধারণ জোয়ারে সেই বাঁধ প্লাবন ঠেকাতে পারে না, আর জলোচ্ছ্বাসে কী করে ঠেকাবে?
তিনি জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত ৮টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে হরিষখালী, পার্শেমারী, খলষিবুনিয়া, লেবুবুনিয়াসহ ৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে আছে।
কৈখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী, নৈকাটিসহ বেশ কয়েক জায়গায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধ ভাঙলে গোটা ইউনিয়ন নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিবুল আলম বলেন, উপজেলায় ১৬৩ সাইক্লোন শেল্টারকে প্রস্তুুত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীকে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় তৈরি থাকার জন্য বলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ নগদ অর্থ মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। উপকূলের মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে প্রায় চার হাজার মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবং যেসব এলাকার মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে আসেননি তাদের জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ—১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এম সালাউদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ—নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১২৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাত/আটটি পয়েন্টের প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে মাটি ফেলে উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে বাঁধের ভাঙন ও ধস ঠেকানোর কাজ চলছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন,সন্ধা ৬টা থেকে রাত ১২ টার ভীতরে সাতক্ষীরা মোংলা উপকুল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় “রামেল” মুল অংশ বাংলাদেশের সিমানা অতিক্রম করতে পারে।ঝড়ের অগ্রভাগ উপকুলে অবস্থান করছে। এখন বাতাসের গতিবেগ ৯০ থেকে ১২০ কি:মি:। সেসময় বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।