Print

Rupantor Protidin

দৌলতপুরে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এমপির ভাই চেয়ারম্যান হচ্ছেন

প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৬, ২০২৪ , ৯:৩০ অপরাহ্ণ | আপডেট: মে ১৬, ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

দ্বিতীয় ধাপের আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে চেয়ারম্যান পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় এমপি অালহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। টোকেন চৌধুরীর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৌশলী আনিসুর রহমানকে চেনেন না এ উপজেলার মানুষজন। তাকে এর আগে কখনো দেখা যায়নি বলে অনেকে জানিয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি নির্ভার টোকেন চৌধুরী প্রতিদিন সৌজন্যমূলক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সভা করে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন। অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের মধ্যে দৌলতপুর আসনের প্রথম সংসদ সদস্য আক্কাস আলী সরকারের ভাতিজা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট হাসানুল আসকার হাসু কাকতালীয়ভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর আপন ভাই উপজেলা যুবলীগ সভাপতি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে। যা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। টোকেনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান (স্বতন্ত্র) ঘোড়া প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকলেও রয়েছেন সম্পূর্ণ আলোচনার বাইরে। তিনি সিরিয়াস প্রার্থী হলেও অনেকটা ডামি প্রার্থীর মতোই মনে করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের বাড়ি উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামে। বাবার নাম মো. কাদের মণ্ডল। তবে নিজ গ্রামের মানুষও আনিসুরকে ঠিকমতো চিনতে পারছেন না। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন। অর্থসম্পদের কমতি নেই তার। তিনি গণসংযোগ চালাচ্ছেন, ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগ না থাকায় এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে পরিচিতি অর্জন করাই আনিসুরের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।

এদিকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম তোলেননি। সাবেক এমপি প্রয়াত আফাজ উদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে এডভোকেট এজাজ মামুন আগের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান এমপি আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর ছোট ভাই টোকেন চৌধুরীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে এবার পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় নিশ্চিত পরাজয়ের আশঙ্কায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন নির্বাচনে অংশ নেননি বলে দলটির নেতাকর্মীরা জানান। অনেকের মতে, দলীয়ভাবে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে মামুন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্বাচনে অংশ না নেয়া এবং প্রভাবশালী প্রার্থী এডভোকেট হাসানুল আসকার অজ্ঞাত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীর জয়ের ব্যাপারে আর বাধা নেই। বাকি রয়েছে শুধু ২১ মের আনুষ্ঠানিকতা। যদিও এডভোকেট মামুনের কাছে গতবারের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বদলা নেয়ার মনোবাসনা পূরণ হচ্ছে না টোকেনের। ফুরফুরে মেজাজে থাকা টোকেন চৌধুরী আগের নির্বাচনের মতো এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়েছেন। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করলেও তিনি নিয়মিত গণসংযোগ ও নির্বাচনী সভা করে ভোট চাইছেন। এসব সভায় তিনি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি যে কোনো সংকটে সবার পাশে থেকে সেবা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন।

সার্বিকভাবে পুরো পরিস্থিতি অনুকুলে থাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, সংসদ সদস্য আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই যুবলীগ নেতা বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীই হতে যাচ্ছেন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এ কারণে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন নিয়ে এখানকার মানুষের মধ্যে খুব একটা মাতামাতি না থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের ভোট বেশ জমে উঠেছে। তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং চারজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন।

প্রার্থীদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহেরুল ইসলাম (তালা), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান কামরুল (টিউবয়েল) ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদ (উড়োজাহাজ)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইকফাত আরা জলি (কলস), বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনালী খাতুন (হাঁস), মারুফা ইয়াসমিন (ফুটবল) ও নতুন মুখ ফারজিয়ানা খাতুন (পদ্ম ফুল)। এই প্রার্থীদের পক্ষে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার সব এলাকা। শেষ মুহূর্তের গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।