এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার। এ বছর ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে আমাদের অভিনন্দন। জানা গেছে, এবার ২৯ হাজার ৮৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৭৯৯টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন।
জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন ও ছাত্র ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। এ বছর শতভাগ পাস করেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৮টি। গত বছর ২ হাজার ৩৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। ফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের এ অনন্য কৃতিত্ব পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অশেষ আনন্দ-উৎসবের কারণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংগত কারণেই গর্বিত।
সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের শ্রম ও সাধনার সুফল দিয়েছে। শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতে ভালো ফলের এ ধারা বজায় রাখবে- এটাই কাম্য। ফলাফল মূল্যায়নে দেখা গেছে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফলাফলের সব সূচকে এবারো মেয়েরা এগিয়ে। এর আগের চার বছরও জিপিএ-৫ এবং পাসের দিক থেকে মেয়েরাই এগিয়ে ছিল। পরপর পাঁচ বছর বেশ চমক দেখাল মেয়েরা। এমন ফলে খোদ প্রধানমন্ত্রীও বিস্মিত হন। কেন বারবার মেয়েরা এগিয়ে এবং ছেলেরা পিছিয়ে যাচ্ছে, এর কারণ বিশ্লেষণ দরকার মনে করেন তিনি।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়েদের তুলনায় সব সূচকেই পিছিয়ে ছেলেরা। ছাত্রীদের পাসের হার যেখানে ৮৪.৪৭ শতাংশ, সেখানে ছাত্রদের পাসের হার তিন শতাংশ কমে ৮১.৫৭ শতাংশে নেমেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। এবার ৮৩ হাজার ৩৫৩ ছাত্র জিপিএ-৫ পেলেও ১৫ হাজার বেড়ে ছাত্রীদের সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জনে। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে ছেলেরা।
কেন পিছিয়ে ছেলেরা? এমন প্রশ্ন সামনে আসছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, ক্লাসে কম উপস্থিতি এবং নিয়মানুবর্তিতা ও অধ্যবসায়- কোনো ক্ষেত্রে মনোযোগ কম ছেলেদের। এজন্য ছেলেদের সুশৃঙ্খল জীবনযাপন জরুরি। পড়ালেখার প্রতি তাদের আকৃষ্ট করতে হবে। অন্যদিকে ভালো ফলের পেছনে মেয়েদের অধ্যবসায়ী মনোভাব বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ এবং মেয়েদের উপবৃত্তির আওতায় আনায় মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশ নেয়া বেড়েছে বলে ফলাফল ভালো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের জীবনে মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি শিক্ষার মান বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হচ্ছে, তার যথাযথ নিরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ছে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে, বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা কমে গেছে। তবে এখনো দেশে নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য, কোচিং-বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
এগুলো শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হলে উত্তীর্ণদের কলেজ বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনায় দেশে এ জাতীয় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক কৃতকার্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কলেজে ভর্তির সুযোগসহ সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।