Print

Rupantor Protidin

শিক্ষকদের কর্মসূচিতে উপচার্যপন্থি অছাত্র ও বহিরাগতদের দফায় দফায় হামলা

প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৯, ২০২৪ , ৯:২৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ৯:২৭ অপরাহ্ণ

Sheikh Kiron

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সম্প্রতি সময়ে উপচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রক্টরের অবৈধ অনলাইন পিএইচডি ডিগ্রির অনুমোদন, শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও কতিপয় শিক্ষককে পদোন্নতি ও একটি অংশকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত, পদোন্নতি নীতিমালায় না থাকলেও শিক্ষকদের পদোন্নতির সময় অবৈধ শর্ত প্রদান এবং বিভিন্ন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রদানের দায়িত্ব হস্তান্তর না করা। এছাড়াও উপাচার্যের পছন্দের লোকদের আইন লঙ্ঘন করে দায়িত্ব দেওয়া, উপাচার্য কর্তৃক সাবেক শিক্ষার্থী দিয়ে ক্যাডার বাহিনী তৈরি করা এবং এই ক্যাডারদের দ্বারা শিক্ষকদের পেটানো এবং গালিগালাজ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার অর্থ ব্যয়ে অস্বচ্ছতা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

কয়েক দফা আন্দোলন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতি। পরে উপাচার্যসহ, ট্রেজারার এবং প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। তবে চলমান আন্দোলনে প্রায়শই শিক্ষকদের সাথে মারামারি ও গালাগালি করতে দেখা যাচ্ছে সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদে আবেদন করেছেন এবং কয়েকজন শাখা ছাত্রলীগের পদ ভাগিয়ে আনার জন্য এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কয়েকজন হলেন হত্যা ও শিক্ষার্থীদের মারধরের মামলার আসামি, কয়েকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ, এলাকায় লুট পাটের অভিযোগ, সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ এবং শিক্ষকদের হামলা, হুমকি ও গালাগালির অভিযোগ। তবে গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নেতৃত্বেই শিক্ষকদের উপর হামলা করেন এই সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাদের কেউ বর্তমান শিক্ষার্থী নন। কারণ বর্তমান সর্বশেষ স্নাতকোত্তর চলমান সেশন হলো ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩তম ব্যাচ।

প্রতিবেদকের হাতে থাকা ভিডিওতে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড. মো. শামিমুল ইসলাম কে বিপ্লব দাস ও আমিনুর রহমান বিশ্বাস ধাক্কা দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর আমিনুর বিশ্বাস ও রকিবুল হাসান রকি গিয়ে শিক্ষক লাউঞ্জ বন্ধ করে দেন। এসময় সাবেক শিক্ষার্থী পার্থ সরকার, বিপ্লব দাসসহ অনেকে শিক্ষকদেরকে কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে দেখা যায়। হামলা চলাকালে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহের, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আহত হন। পরবর্তী আমিনুর বিশ্বাস পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে ধাক্কা দিলে হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারিও উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে শিক্ষকদের উপর হামলা করেন তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন যোগদানে পরপরই অস্ত্রসহ ক্যাম্পাসে মহড়া দেন তাদের কয়েকজন। উপাচার্য ও প্রক্টরের ইন্ধনে ঐ অস্ত্র মহড়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি, মারধর করে আসছেন তারা। পরে শিক্ষকদেরও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা শুরু করেন তারা। তবে সময়ে এসব অঘটন ঘটলেও কোনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। উলটো উপাচার্য তাদের সাথে বিভিন্ন উৎসব পালন ও মিটিং করে দিক নির্দেশনা দিতে দেখা যায় উপাচার্যকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনার আগে উপাচার্যের বাংলোতে বসে মিটিং করেন তারা। এবার প্রশ্ন উঠেছে এরা আসলে কারা?

জানা যায়, তাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে আবেদন করেছেন। উপাচার্য তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিবেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পাইয়ে দিতে উপাচার্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেন বলেও জানা গেছে। তারা হলেন, নৃবিজ্ঞান ১০ ব্যাচের আমিনুর রহমান বিশ্বাস, লোকপ্রশাসন ৫ম ব্যাচের অনুপম দাস বাঁধন, রেজা-ই-এলাহি, অর্থনীতি বিভাগের ৮ম ব্যাচের মাসুদ আলম, আরিফুল ইসলাম বাপ্পী, ফয়সাল হোসেন, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ৯ম ব্যাচের ইকবাল হোসাইন খান, মেহেদী হৃদয়, একই বিভাগের ১০ ব্যাচের পার্থ সরকার, মার্কেটিং ৪র্থ ব্যাচের বিপ্লব চন্দ্র দাস, বাংলা ৯ম ব্যাচের ইমরান হোসাইন, প্রত্নতত্ত্ব ১১ ব্যাচের মুশফিকুর রহমান খান তানিম, মার্কেটিং ৯ম ব্যাচের রকিবুল হাসান রকি, লোকপ্রশাসন ১১ ব্যাচের এম নুর উদ্দিন হোসাইন, ও ফার্মেসি ১০ম ব্যাচের ইমাম হোসেন মাসুম প্রমুখ।