ঈদুল ফিতর কবে- এ নিয়ে খানিকটা অনিশ্চয়তা থাকলেও সারা দেশে এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আবহ। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল বুধবার (১০ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে পরদিন বুধবার রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে ঈদ উদযাপিত হবে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল)।
পবিত্র ঈদুল ফিতর বুধবার না বৃহস্পতিবার তা জানা যাবে আজ মঙ্গলবার। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণে সভা করবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। সভায় ১৪৪৫ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করে ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
চন্দ্র মাস শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী খালি চোখে চাঁদ দেখার শর্ত রয়েছে। সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ বিকাল থেকেই শাওয়ালের চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিন বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগির পাশাপাশি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অন্যের সঙ্গে। দোয়া ও মোনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। ধনী-দরিদ্র ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে ঈদ ঘিরে আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি ছুটি। ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।
ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এ ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবার। হাসপাতাল ও এতিমখানায় বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকবে। সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকবে উন্নতমানের খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।
এদিকে কাপড়চোপড়ের মার্কেটে চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটার ধুম। আজ মঙ্গলবার শেষ সময়ের ভিড় জমে উঠবে কাঁচাবাজারসহ মাংস, মুরগি, মসলা ও পোলাওর চালের দোকানেও। অন্যদিকে নাড়ির টানে লাখো মানুষ ছুটছে গ্রামের পানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যরাও নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবেন।
রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। এরই মধ্যে ঈদের প্রধান জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া বৈরী থাকলে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।