Print

Rupantor Protidin

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৫০ শয্যার হাসপাতালে ৩১ শয্যার সেবা, ৩৮ শূন্য পদ

প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৪, ২০২৪ , ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

Sheikh Kiron

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা ৫০ শয্যার হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে ৩১শয্যার স্বাস্থ সেবা। রয়েছে ৩৮পদ শূন্য। দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা ঘোড়াঘাট। এখানে একটি মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসেন ৭থেকে ৮শতাধিক উপজেলার রোগী। ৩১শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০শয্যার ভবন নির্মান হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। তবে সেই ভবনের অনুমোদন মিলেছে গত বছরে। নব নির্মিত ভবনের কার্যক্রম চালু হলেও ৫০ শয্যার জনবল নিয়োগ হতে সময় লাগতে পারে আরো ৪থেকে ৫বছর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তাই জনবল নিয়োগের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালটিতে মিলবে না ৫০ শয্যার আধুনিক চিকিৎসা সেবা। বাধ্য হয়েই ৫০ শয্যার হাসপাতালে দিতে হচ্ছে ৩১শয্যার সেবা। তবে সেই ৩১শয্যার সেবা পাওয়াও যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে শত শত রোগীর কাছে। বিভিন্ন পদে ৩৮ জন জনবল শূন্য থাকায় কাঙ্খিত অনেক সেবাই দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিতে জানা যায়, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ৩১শয্যার সেবা প্রদান কার্যক্রমে হাসপাতালটির বিভিন্ন পদে জনবল থাকার কথা ১২২জন। তবে বর্তমানে জনবল আছে ৮৪জন। এদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ ফাঁকা রয়েছে ৫টি। বাকি ৩৩টি শূন্য পদ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের।

ঘোড়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা। পূর্বপাশে গাইবান্ধার উপজেলা পলাশবাড়ী। ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান তুলনামূলক ভালো হওয়ায় পুরো ঘোড়াঘাট উপজেলা সহ ওই তিন উপজেলার অনেক মানুষ সেবা নিতে আসেন ঘোড়াঘাটের এই সরকারী হাসপাতালটিতে।

হাসপাতালের তথ্য বলছে, প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালটির বহিঃ বিভাগে সেবা নেন ৬৫০থেকে ৭০০জন, আন্তঃ বিভাগে সেবা নেন ৫০থেকে ৫৫জন এবং ল্যাবে সেবা নেন গড়ে ২০থেকে ৩০জন রোগী। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনবল সংকটে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ৩১শয্যার পুরাতন ভবনের নিচতলায় জরুরী বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও দূর্ঘটনায় আহত ৫জন রোগী এবং তাদের স্বজনরা সেখানে ভীড় করে আছেন। দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক এবং অন্য স্টাফরা তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সেবা প্রদান করছেন। সদ্য অনুমোদন পাওয়া ৫০ শয্যার নতুন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় নানা বয়সী দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু সেবা গ্রহণ করছেন।

এছাড়াও হাসপাতালটির আন্তঃ বিভাগের অধিকাংশ বেডেই শুয়ে রয়েছেন নানা সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য বলছে, হাসপাতালটিতে প্রথম শ্রেণীর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের ১টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর সহকারী সার্জনের ৩টি ও সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১টি পদ শূন্য রয়েছে।

অপরদিকে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (এসআই) পদে ১জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ১জন, স্টোর কিপার পদে ১জন, ওয়ার্ড বয় পদে ৩জন, আয়া পদে ২জন এবং কুক পদে ২জন থাকার কথা। তবে এসব পদে জনবল সংখ্যা শূন্য। এছাড়াও, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৪টি, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৩টি, স্বাস্থ্য সহকারীর ৫টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ২টি, নিরাপত্তা কর্মীর ১টি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৪টি এবং অফিস সহায়কের ৪টি পদ শূন্য পড়ে আছে। এই সব গুলো শূন্য পদ ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীর।

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় আমাদের হাসপাতালের সেবার মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। তবে কম সংখ্যাক জনবল নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। শূন্য পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিভিন্ন সময়ে আমরা সির্ভিল সার্জন বরাবর চারবার চিঠি দিয়েছি। উন্নীত ৫০ শয্যায় জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

এদিকে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ.এইচ.এম বোরহান-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। ঈদের পরেই সেটির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে। পুরো জেলায় ১৪৩টি শূন্য পদ রয়েছে। অনেকে আবার পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছে। পদোন্নতি হলে দিনাজপুর জেলায় সর্বোমোট ৪০৭টি পদ শূন্য হবে। আমরা একটি নীতিগত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। আশা করছি অতিশীঘ্রই শূন্য পদ গুলোতে জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।