যশোরে পালিত পুত্রের হাতে মায়ের নির্মম হত্যা

আগের সংবাদ

যবিপ্রবি'র সহকারী প্রকৌশলী শাহেদ রেজা সাময়িক বরখাস্ত

পরের সংবাদ

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

২২ চিকিৎসকের মধ্যে পাওয়া গেল ৬ জন

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫ , ৮:৩৭ অপরাহ্ণ আপডেট: মে ২৫, ২০২৫ , ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক শনিবার দুপুর ১২টা। মণিরামপুর ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নিচ তলায় বহির্বিভাগে টিকিট হাতে সেবার অপেক্ষায় বেশ কয়েকজন রোগী। হাসপাতালের এই ফ্লোরে চিকিৎসকদের ৫টি কক্ষে ১১ জন চিকিৎসকের চেয়ারের মধ্যে খালি পড়ে আছে নয়টি চেয়ার। একই ভবনের দোতলায় চারজন চিকিৎসকের চারটি কক্ষের মধ্যে বন্ধ রয়েছে দুটি কক্ষ। হাসপাতালের এই দুই ফ্লোরে ইউনানী ও হোমিও চিকিৎসকসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। বাকি ১১ জন চিকিৎসকের চেয়ারে পাওয়া গেছে চিকিৎসকদের দুইজন সহকারীকে। আর এনসিডি কর্ণারে চিকিৎসকের চেয়ারে বসে আছেন কামাল হোসেন নামে একজন। কামাল হোসেন চিকিৎসায় ডিপ্লোমা শেষ করে ইন্টার্নশিপ করতে এসে গুরুত্বপূর্ণ এই কক্ষে রোগী দেখছেন। এসময় হাসপাতালে পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমেদ ও আরএমও হুমায়ুন রশিদকেও। মণিরামপুর হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ২৩ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। যারমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন পাঁচ জন। কাগজে কলমে ২৩ জন চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও শনিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে চিকিৎসক না পেয়ে হতাশ হয়েছেন রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসক না থাকার চিত্র নতুন নয়। প্রায় প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার এই চিত্র দেখা যায়। শনিবার দুপুর ১২ টায় সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন রোগী কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে চিকিৎসকদের কক্ষের বাইরে অপেক্ষায় রয়েছেন। নতুন ভবনের নিচ তলার ১১৬ ও ১১৭ নম্বর কক্ষের দরজা বন্ধ। বাইরে রোগীর অপেক্ষা দেখে দরজা খুলতে দেখা গেল ১১৬ নম্বর কক্ষে কোন চিকিৎসক নেই। ভিতরে দুই জন চিকিৎসকের সহকারী ইফতেখার রসুল ও আনিসুর রহমান রোগী দেখছেন। ১১৭ নম্বর কক্ষটি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য নির্ধারিত। সেখানেও দরজা বন্ধ করে ভিতরে চিকিৎসকের চেয়ারে বসে আছেন কামাল হোসেন নামে একজন। কামাল হোসেন চিকিৎসায় ডিপ্লোমা শেষ করে ইন্টার্নশিপ করতে এসে গুরুত্বপূর্ণ এই কক্ষে রোগী দেখছেন। ১১৮ নম্বর কক্ষ দন্ত বিভাগে দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে আছেন চিকিৎসকের সহকারী আব্দুর রউফ। তিনি বলছেন, এই কক্ষে একজন দন্ত চিকিৎসকের নিয়োগ থাকলেও তিনি যশোর সদর হাসপাতালে রোগী দেখেন। ১১৯ নম্বর কক্ষে দুইজন চিকিৎসকের চেয়ার খালি পড়ে আছে।এসময়  শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে ভিতরে কক্ষে দুই জন চিকিৎসকের রোগী দেখার ব্যবস্থা থাকলেও একটি চেয়ারে বসে রোগী দেখছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইদ্রিস আলী। ওই কক্ষের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেসমিন সুমাইয়ার চেয়ারটি খালি পড়ে আছে। এসময় নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসক তাহসিনা ইসলামকে পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালের দোতলায় ইউনানী ও হোমিও চিকিৎসককে পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুমন কবির ও চিকিৎসক অনুপ বসুকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহির্বিভাগে চারজন চিকিৎসক ছাড়া জরুরি বিভাগে ডা. রাফেজা খাতুন দায়িত্বে পালন করেছেন। এসময় গাইনী বিশেষজ্ঞ দিলরুবা ফেরদৌস ডায়না দোতলায় নিজ কক্ষে সিজারের কাজে নিয়োজিত আছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আর কোন চিকিৎসককে শনিবার হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।কহিনুর আক্তার নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে ঠাণ্ডাজ্বর নিয়ে হাসপাতালে এনেছি। কোন ডাক্তার না পেয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছি। এদিকে দুপুর একটার দিকে নিজের কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমেদকে। এসময় হাসপাতালে বহির্বিভাগের চিত্র নিয়ে জানতে চাইলে তিনি হাসপাতালে কতজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন, কতজন আসেননি, কেনইবা আসেননি তার কিছুর উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

ফাইয়াজ আহমেদ বলেন, আমি সকাল থেকে দুটো মিটিংয়ে ছিলাম। চিকিৎসকদের ডিউটির বিষয়ে আরএমও বলতে পারবেন।

মণিরামপুর হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এই হাসপাতালে নিযুক্ত কমেডিস বিশেষজ্ঞ সুমন কবির, শিশু বিশেষজ্ঞ ইদ্রিস আলী ও জেসমিন সুমাইয়ার ছুটির দিন বাদে সপ্তাহে ছয় দিন ডিউটি থাকলেও তারা সপ্তাহে তিন দিন করে হাসপাতালে আসেন। আবার যাও তিন দিন আসেন সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা চেম্বার ছাড়েন। তাঁরা নিয়মিত এভাবে অনিয়ম করলেও তার খবর রাখেন না কেউ। শুধু এই তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন এই হাসপাতালে কোন চিকিৎসকই নিয়ম মেনে ডিউটি করেন না। সকাল সাড়ে আটটায় চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও কেউ ১০টা বা সাড়ে ১০টার আগে চেম্বারে বসেন না।

সূত্রটি বলছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমেদ যোগদকনের পর থেকে বেশ কয়েকমাস থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার কাজ চলছে অনেকটা দায়সারা ভাবে। তিনি হাসপাতালের আরএমও হুমায়ুন রশিদের উপর ভরকরে হাসপাতাল চালাচ্ছেন। কোন চিকিৎসক কাজে যোগ দিয়েছেন কে কাজে যোগ দেননি, রোগীরা কেমন সেবা পাচ্ছেন এসবের কোন খবর রাখেন না তিনি। তিনি হাসপাতালে এসে বিভিন্ন সভা মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন।

পরে আরএমও হুমায়ুন রশিদ মোবাইল ফোনে বলেন, শনিবার বহির্বিভাগে দুই জন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। ছয় জন চিকিৎসক ছুটিতে আছেন।

আরএমও আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমন কবির, ইদ্রিস আলী ও জেসমিন সুমাইয়া সপ্তাহে তিন দিন করে বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। তাদের ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়