জরুরি বিভাগ সচল
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া দেশের চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে করা রিটের রায়কে কেন্দ্র করে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দফায় তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নামেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) এর ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ সারা দেশের মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় জরুরি বিভাগ ছাড়া সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে হাসপাতালে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পরেও দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা শুধু আশ্বাসই পেয়েছি, বাস্তবসম্মত কোনো সমাধান হয়নি।
রায় বিপক্ষে গেলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আদালতের রায় যদি তাদের বিপক্ষে যায়, তাহলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন, যা হাসপাতালে সেবার সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষার্থী ফারহান হোসেন বলেন, ‘আমরা দিনের পর দিন ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে আন্দোলন করছি। কিন্তু এখনো আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। আমরা চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষার জন্য এই লড়াই চালিয়ে যাব। যদি আমাদের কথা না শোনা হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’
আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘শুধু আশ্বাস দিয়ে আমাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা এমন একটি সিদ্ধান্ত চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর এই ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে না হয়। স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো ও রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতেই আমরা এই আন্দোলন করছি।’
সেবা কার্যক্রম বন্ধ, জরুরি বিভাগ চালু
চিকিৎসকদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা বন্ধ রয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, বৈকালিক সেবাও বন্ধ রাখা হবে। তবে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাজুয়ালটি বিভাগ, এডমিশন ইউনিট এবং লেবার ওয়ার্ড চালু থাকবে, যাতে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
২০১৩ সালে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) ডিগ্রিধারী সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (স্যাকমো) কয়েকজন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইনের কয়েকটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহারের অনুমতির জন্য আদালতে রিট দায়ের করেন। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল এই রিটের প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রিটটি ৬৭ বার কজ লিস্টে এলেও ব্যাখ্যাহীন কারণে এ বিষয়ে কোনো শুনানি হয়নি। দীর্ঘ আইনি জটিলতার পর, গত বছরের (২০২৪ সালে) ২৫ ফেব্রুয়ারি রিটের ৯১তম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আদালত রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। তারপর থেকে টানা আন্দোলনে নামে চিকিৎসকসহ মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বলছেন, জনসাধারণকে অপচিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা করা, স্বাস্থ্যখাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়ন জরুরি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলের’ প্রতিবাদে তারা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি যেকোনো সময় উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।