চৌগাছায় তুচ্ছ ঘটনায় স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

আগের সংবাদ

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে ইবি

পরের সংবাদ

শ্রীমঙ্গ‌লে শিক্ষার্থী‌দের পাঠাভ‌্যাস গ‌ড়ে তুল‌ছে উত্তরণ পাঠচক্র ও পাঠকসংঘ

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫ , ৭:০৭ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৫ , ৭:০৭ অপরাহ্ণ

ডি‌জিটাল সম‌য়ে শ্রীমঙ্গ‌লে পাঠাভ‌্যাস গ‌ড়ে তুল‌তে কাজ কর‌ছে উত্তরণ পাঠচক্র ও পাঠকসংঘ। শহ‌রের ক‌লেজ রো‌ডে ভি‌ক্টো‌রিয়া স্কুল মা‌র্কেটে উত্তর‌ণের ঠিকানা।

শ্রীমঙ্গল সরকারী ক‌লে‌জের বাংলা বিভা‌গের অধ‌্যাপক মোঃ সাইফুল ইসলাম এই প্রতিষ্ঠা‌নের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। তি‌নি ব‌লেন, আমার নিজ এলাকা থে‌কেই ছোট আকা‌রে পাঠাভ‌্যাস বাড়া‌নোর এই কাজ‌টি শুরু ক‌রে‌ছি। বহু শিক্ষার্থী আজ বইবিমুখ, কর্মক্লান্ত মানুষের কাছে আজ কাগ‌জের বইয়ের আবেদন গৌণ।

তি‌নি ব‌লেন, নিরানন্দ পাঠ্যপুস্তক পড়ার অনীহা আর ভীতি থাকলেও পরীক্ষায় আজ অনুত্তীর্ণ খুঁজে পাওয়া যায় না! যে সময়ে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠার কথা সে সময়টায় মুঠোফোন, গেমস খেলে আর চ্যাট করে, সময়‌-খে‌কো ছবি দেখে সময় কাট‌ছে তরুণ‌দের। সামাজিক যোগ মাধ্যমগুলো তাদের প্রায় অসামাজিক ক‌রে তু‌লে‌ছে। কথাগু‌লো সত‌্য, কিন্তুু সব সত‌্যকে জে‌নেও শ্রীমঙ্গ‌লে গ‌ড়ে তুলে‌ছি পাঠচক্র, প‌রিবর্তনটা আমা‌দেরই কর‌তে হ‌বে। ছোট‌দের দোষা‌রোপ ক‌রে হ‌বেনা, আমা‌দের কাজ কর‌তে হ‌বে।

শ্রীমঙ্গ‌লে দীর্ঘদি‌নের দাবী আ‌ছে কিন্তু গণগ্রন্থাগার নেই। অথচ সরকারের জাতীয় গ্রন্থাগার নীতিতে বলা আছে, গণগ্রন্থাগার নেটওয়ার্ক ক্রমান্বয়ে গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা যাতে যে কোন নাগরিক তার বাসস্থানের এক মাইল দূর‌ত্বের মধ্যে একটি গণগ্রন্থাগার থেকে গ্রন্থাগার পরিষেবা পেতে পারেন।

উত্তর‌ণ পাঠচ‌ক্রের ঘোষণায় বলা হ‌য়ে‌ছে, কেউ বলতে পারেন, কৌতূহল থাকলে নিজ উদ্যোগেও বই পড়া যায়। এর জবাবে রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃতি দেওয়া যায়, বুদ্ধির জড়তা যেখানে সেই খানে কৌতূহল দুর্বল। জড়তা কাটাতেই বইপড়া প্রয়োজন। বুদ্ধির জড়তা ঘুচলেই কেবল একজন চিন্তাশীল, যু‌ক্তিনিষ্ঠ, পরমতসহিষ্ণু সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব।

ইসলাম ধর্মে ইলম বা জ্ঞানার্জন ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, হিকমত বা প্রজ্ঞার সাথেই রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। সনাতন ধর্মের ‘বেদ’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘বিদ’ ধাতু থেকে যার অর্থ জ্ঞান। জ্ঞান অর্জনের জন্য এক সময় শিষ্যকে যেতে হত গুরুর আশ্রমে।

বর্তমা‌নে বইপড়ার বন্ধ্যাত্ব চল‌ছে। তা থে‌কে উত্তর‌ণের জন‌্য শ্রীমঙ্গ‌লের স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার জ্ঞানানুরাগী, বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পাঠকমঞ্চ এরম‌ধ্যেই কা‌ঙ্খিত ল‌ক্ষ্যের দি‌কে এ‌গি‌য়ে চ‌লে‌ছে। প্রায় অর্ধশতা‌ধিক পাঠক নিয়‌মিত বুকশ‌পে আস‌ছেন। ছাত্র-ছাত্রী‌দের আগ্রহও আশাব‌্যাঞ্জক, কোন কোন সমীক্ষায় অসাধারণ। তারা বাসায় নি‌য়েও বই পড়‌ছেন, রি‌ভিউ দি‌চ্ছেন।

উত্তরণ বইপড়া ও বই বিক্রয় কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী তারেক আহমেদ ব‌লেন, জসীম উদ্‌দীন তাঁর ‘আরো বই পড়ুন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলে‌ছি‌লেন, আপনি একখানা বই কিনলেন না এক টুকরো বিশ্ববিদ্যালয় আপনার ঘরে এলো। অথচ বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়া এখন দীনতার রীতিমত লক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বলব উপহার বা পুরস্কার হিসেবে বই না দেওয়াটাই বরং মানসিক দৈন্যের লক্ষ্মণ। কিছু নেতিবাচক দিক থাকলেও আজকাল পিডিএফ বা সফট ভার্সন (ই-বুক) যে কোন স্থানে বসে বইপড়াটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে প্রিন্টেড বা ছাপা বইয়ের প্রয়োজনের উপর এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি।

এখনকার অ‌ধিকাংশ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জানে না ফেলু দা, চাচা চৌধুরী, অপু, দুর্গা, দীপুর কথা। নাম শুনেনি সত্যজিৎ রায়, নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, শেখ সাদী, ঈশপের মত কিংবদন্তি লেখকের। উন্নত জীবন, মহৎজীব‌নের লেখক ডাঃ লুৎফর রহমান, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার পথিকৃৎ ড. আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন এদের কাছে অজ্ঞাত। আজ কোমলমতি শিশুদের হাতে উঠছে না ইতল-বিতল, আবোল-তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাখ-পাখালির ছড়া, পাখির কাছে ফুলের কাছে প্রভৃতি আনন্দপাঠ।

তি‌নি ব‌লেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের খ্যাতিমান সব লেখকের বইয়ের এক অপূর্ব সমাহার নিয়ে আমরা সাজিয়েছি আমাদের বুকশপ। আমরা সুন্দর আগামীর জন‌্য প্রচেষ্টা চা‌লি‌য়েই যা‌বো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়