যশোরের চৌগাছায় তুচ্ছ ঘটনায় স্বামীর হাতে স্ত্রী রেক্সনা খাতুন (৪০) নিহত হয়েছেন। স্বামী রাকিব হোসেন সিজার পালাতক। রেক্সনা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আন্দুলিয়া গ্রামের সানোয়ার হোসেনের মেয়ে। সানোয়ার হোসেন বর্তমানে স্বপরিবারে মহেশপুর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। অভিযুক্ত স্বামী রাকিব হোসেন উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের মৃত আবদার রহমানের ছেলে। সোমবার (১০মার্চ) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত রাকিবের শারিরিক প্রতিবন্ধী মা শাহানাজ বেগম জানান, রেক্সনা রাকিবের ২য় স্ত্রী, ১ম স্ত্রী ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার ১০/১১ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। পাশের গ্রামে নানা বাড়িতে থাকে। তিনি বলেন, ২য় স্ত্রী রেক্সনাকে নিয়ে রাকিব চৌগাছা শহরের একটি ভাড়া বাসায় থেকে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতো। ৪/৫ দিন আগে রেক্সনার সাথে গোলযোগ করে সে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। রেক্সনা রোববার (৯মার্চ) রাতে গ্রামের বাড়িতে আসে। তিনি জানান, সকালে দুইজন কথাকাটাকাটি করার এক পর্যায়ে মারামারি লেগে যায়। আমি চলাফেরা করতে পারিনা। একটা চেয়ারে বসে থাকি। ওদের মারামারি লেগে গেলে আমি কোন রকমে আমার ঘর থেকে যেয়ে থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি।
তিনি জানান, আমাকে ওরা খেতে দেয় না। আমি এই চেয়ারে বসে গ্রামে এর ওর কাছ থেকে চেয়েচিন্তে খাই। কিন্তু বউমার অভিযোগ ছিলো ছেলে আমাকে খেতে দেয়, আগের ঘরের ছেলেকে মিস্টি কিনে দেয়। এ নিয়ে ওদের প্রায়ই গোলমাল হতো।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রেক্সনার লাশ পড়ে আছে। পাশে একটি বাশের অংশ। যাতে রক্ত লেগে আছে। রেক্সনা চৌগাছার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই বাড়ির মালিক জুয়েল ঘটনাস্থলে গিয়ে রেক্সনার ফোনে কল দিলে সেটি খোলা পাওয়া যায়। রিংটোনের সূত্র ধরে পুলিশ রেক্সনা ও রাকিবের মা’য়ের ফোন দুটি রাকিবের মা’ যে ঘরে থাকেন, সেই ঘরের একটি পাতার (জ্বালানির জন্য বিভিন্ন গাছের শুকনা পাতা) বস্তার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, রাকিব-রেক্সনা কবে বিয়ে করেছেন সেটাও তারা জানতেন না। তারা জানতেন রাকিব আবার বিয়ে করেছে। তবে মাঝে-মধ্যে তারা বাড়িতে আসতো, ঝগড়াঝাটি করতো। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায় রেক্সনার আগে একাধিক বিয়ে হয়েছিলো। তার ১ম স্বামীর মেয়ে বিবাহিত।
রেক্সনা-রাকিব যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সে বাড়ির মালিক তৌহিদুর রহমান জুয়েল বলেন, রেক্সনা একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো। রোববার সন্ধ্যায় সে বলে আমি শ^শুরবাড়ি যাচ্ছি। কাল (সোমবার) সকালে এসে কাজে যাবো। সকালে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে এসে দেখি পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। রেক্সনার বাবা সানোয়ার হোসেন বলেন, কিছুই জানা ছিলো না। সংবাদ পেয়ে এসে দেখি মেয়ের লাশ।
চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান লাশটির সুরাহতল প্রতিবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ভোতা কিছু দিয়ে আঘাতের ফলে নিহতের কপালের বাম পাশে গভীর ক্ষত হয়। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরই বলা যাবে ঠিক কি কারনে মৃত্যু হয়েছে।
চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৮মার্চ) ভোর রাতে উপজেলার পাতিবিলা গ্রামে ছেলের হাতে খুন হন শরিফুল ইসলাম (৪০) নামে এক কৃষক। তিনদিনেও অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।