আমদানি পণ্যে স্বস্তি, দেশিতে আগুন
রমজান এলেই প্রতিবছর চট্টগ্রামে আমদানি পণ্যের বাজারে আগুন লাগত। যে আগুনের গরমে পুড়তেন চট্টগ্রামের ক্রেতারা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হতো সব আমদানি পণ্য। এটা এক দু‘বছরের বিষয় নয়, দশকেরও বেশি সময় ধরে এমনটাই চলে আসছিল। তবে এবার সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। আমদানি পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বিপরীতে দেশে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের গরমে পুড়ছেন চট্টগ্রামের ক্রেতারা। তবে তা গত বছরের মতো ততটা বাড়েনি।
ক্রেতারা বলছেন, রমজান শুরু হলেই ছোলা-চিনি, ডাল, তেলে হাত দেওয়া যেত না। সেই সাথে বাড়ত দেশে উৎপাদিত নিত্যপণ্যও। এবার সেই আমদানি পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও নিত্যপণ্য বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, বরবটি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপেঁসহ বিভিন্ন সবজির গরমে পুড়ছেন।
ক্রেতারা জানান, রমজানের চাঁদ রাতের আগের দিনও চট্টগ্রামের বাজারে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৩০-৪০ টাকায়। কিন্তু চাঁদ রাত থেকে সেই বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এমনকি কোনো কোনো বিক্রেতা ৮০ টাকা দামেও বিক্রয় করছে বেগুন।
এছাড়া ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, বরবটি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সালাদ পণ্য লেবু, খিরা, শশা, ধনে পাতার দামও বেড়েছে অনেক। এর মধ্যে ১৫ টাকার নিচে কোনো লেবুই পাওয়া যাচ্ছে না। বড় সাইজের একটি লেবু কিনতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম মহানগরীর সবকটি হাটবাজার ঘুরে দেখার সময় ক্রেতাদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্রেতাদের ভাষ্য, প্রতিবছর রমজানে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় ক্রেতাদের। এ বছর সেই
আমদানি পণ্যের দাম তেমনটা বাড়েনি। তবে দেশে উৎপাদিত নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের হোলিখেলা আগের মতোই চলছে।
বিক্রেতাদের দাবি, রমজানে বেগুনসহ সবধরনের সবজি ও সালাদ পণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকারি আড়তেই দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে সালাদ পণ্য।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজিরদেউড়ি কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা বোরহান উদ্দিন বলেন, চাঁদ রাতের আগের দিনের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। বাজারে এখন প্রতিকেজি আলু ৩০-৪০ টাকা, ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা, বাধাকপি ৩০-৪০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেড়স ১০০-১২০ টাকা, শিমের বিচি ১০০-১২০ টাকা, কচুর ছড়া ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মূলা ৩০-৪০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, চিচিঙা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এরপরও গত বছরের একই সময়ের (রমজান) তুলনায় এবার এখনও সবজির দাম কম বলছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছর রমজানে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৫০-২০০ টাকায়। বেগুন বিক্রি হয়েছিল ১৫০-২০০ টাকায়, আলু বিক্রয় হয়েছিল কেজিপ্রতি ১০০ টাকারও বেশি দামে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজারে সবজি কিনতে আসা মো. সানাউল্লাহ বলেন, রমজান এলে বিভিন্ন দেশে জিনিসপত্রের দাম কমে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো সবজির মৌসুম হওয়ার পরও শুধু রমজান শুরু হওয়ায় এখন বাজারে সবজির দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত দু‘দিনের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। তবে গত বছর রমজানের তুলনায় এবার সবজির দাম এখনো পর্যন্ত কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। আবার কখন কি হয় বলা যাচ্ছে না, এর চেয়ে দাম আরও বাড়বে কি না সেই আতঙ্কে আছি। সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে তিনি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।