৫ শতাংশ কোটার সুবিধা পাবে অভ্যুত্থানে হতাহতদের সন্তানরা

আগের সংবাদ

যশোরের রাজারহাটে দুর্ভোগ নিরাশনে বেলি ব্রীজের উদ্বোধন

পরের সংবাদ

মনিরামপুর ইউএনও'র অপসারণ দাবি

টিসিবির দাবিতে সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫ , ৭:০০ অপরাহ্ণ আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৫ , ৭:০৪ অপরাহ্ণ

যশোরের মনিরামপুরে টিসিবির জমাকৃত কার্ড ফেরত ও পণ্যের দাবিতে মনিরামপুরে বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিতরা। সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনিরামপুর পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে প্রায় দুই হাজার মানুষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্নার অপসারণ দাবি করা হয়েছে।

এদিকে আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের মনিরামপুর বাজারের দুইপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যাণ্ড) নেয়াজ মাখদুম ঘটনাস্থলে এসে সড়ক মুক্ত করেন। পরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন এসে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে সরিয়ে দেন।

সরেজমিন জানা গেছে, মনিরামপুর পৌরসভার আওতায় টিসিবির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। আজ সোমবার টিসিবির পণ্য বিতরণের আগে মাত্র কয়েকশ উপকারভোগী পণ্য কেনার জন্য কার্ড পেয়েছেন। বাকিরা কার্ড না পেয়ে পণ্য বিতরণের খবর শুনে পৌরসভার গেটে এসে বিক্ষোভ করেন।

উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনিরামপুর পৌরসভায় ২ হাজার ৭১২ জন টিসিবি পণ্যের উপকারভোগী ছিলেন। সম্প্রতি কার্ড যাচাইবাছাই করে ২ হাজার ২৯৬ জনের স্মার্ট কার্ড তৈরি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এই কার্ড পৌরসভায় হস্তান্তর করলেও সেই কার্ড উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।

সূত্রটি বলছে, স্মার্ট কার্ডধারীদের জন্য ‘টিসিবি স্মার্ট ফ্যামেলি কার্ড সেবা’ নামে একটি সফটওয়্যার রয়েছে। তাতে প্রবেশ করে স্মার্ট কার্ড সক্রিয় করতে হয়। পৌরসভার এই সফটওয়্যারের অনটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) সাবেক পৌর মেয়র মাহমুদুল হাসানের নামে। ওটিপি দিয়ে প্রবেশ করতে গেলে সেটা সাবেক মেয়রের কাছে চলে যাচ্ছে। তিনি পলাতক থাকায় তাঁর কাছ থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা যাচ্ছে না।

পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গেছে, ওটিপি পরিবর্তনের জন্য বারবার আবেদন করেও সেটা সংশোধন করা যাচ্ছে না। একারণে পৌরসভায় টিসিবির স্মার্ট কার্ড বিতরণ সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্মার্টকার্ডের বিপরীতে পণ্য বরাদ্দ এসেছে। সোমবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে যাচাইকরে দরিদ্রদের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

মনিরামপুর পৌরসভার স্টাফ রবিউল ইসলাম বলেন, পণ্য বিতরণ শুরু করার আগে লোকজন এসে হইচই শুরু করে। তখন পণ্য বিতরণ বন্ধ রাখা হয়।

টিসিবির কার্ডধারী পৌরসভার বিজয়রামপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার নামে ছবিসহ একটা কার্ড ছিল। সেই কার্ড জমা দিয়ে পণ্য তোলার পর আর আমারে কার্ড ফেরত দেয়নি পৌরসভা। এজন্য কয়েকবার পণ্য তুলতে পারিনি। অনেক চাপাচাপির পর আমারে একটা কার্ড দেছে। এই কার্ডে কোন ছবি নেই। কার্ডে মনজুর নামে একজনের নাম লেখা আছে।

মোহনপুর ওয়ার্ডের উপকারভোগী আমির হোসেন বলেন, আগে আমাদের ওয়ার্ডে ৩০০ কার্ড ছিল। পণ্য নেওয়ার জন্য ১০০ জনেরে কার্ড দেছে। আমার কার্ড না পেয়ে পণ্যের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। আমরা বর্তমান ইউএনওর অপসারণ চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবির পৌর এলাকার এক উপকারভোগী বলেন, আমার কার্ড আছে। জমা দিয়ে মাল তোলার পর আর কার্ড ফেরত পাইনি। এরপর দুইবার পণ্যও পাইনি।

এই উপকারভোগী বলেন, আগে পৌর কাউন্সিলররা কার্ড বিতরণ করতেন। এখন তাদের পরিবর্তে এলাকার কয়েকজন এই দায়িত্ব পালন করে। তারা ঠিকমত লোকজন চেনে না। একজনের কার্ড অন্য জনকে দিয়ে দিচ্ছে। আমি লোকজন ধরার পর একটা কার্ড দিয়েছে। তাতে অন্য নাম লেখা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের বাতিল করে দেওয়ার পর মনিরামপুর পৌরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডে ইউএনও’র পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমে টিসিবির কার্ড বিতরণের কথা থাকলেও মনিরামপুরে সেটা হয়নি।

পৌরসভায় টিসিবির পণ্য বিতরণের দায়িত্বে থাকা পরিবেশকের এক সহকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ২ হাজার ৩০৮ জনের পণ্য বরাদ্দ পাইছি। ৫৪০ টাকা মূল্যে প্রতিকার্ডের বিপরীতে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি ও দুই লিটার সয়াবিন তেল বিক্রির কথা ছিল। হট্টগোলের কারণে পণ্য বিতরণ করতে পারিনি।

এদিকে আন্দোলন থামাতে আসা মনিরামপুর থানা বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন, আগে আওয়ামী লীগের স্বচ্ছল ব্যক্তিরা টিসিবির পণ্য পেতেন। বর্তমান ইউএনও নিশাত তামান্না সেগুলো পরিবর্তন না করে আগের তালিকায় টিসিবির পণ্য দিচ্ছেন। কার্ড বঞ্চিত অনেক দরিদ্র মানুষ আমাদের কাছে আসেন। আমরা তাদের জবাব দিতে পারি না।

নেতারা বলেন, এই ইউএনও আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি বর্তমান সরকারকে সমালোচিত করতে কাজ করছেন। তাঁকে দ্রুত মনিরামপুর থেকে অপসারণ দরকার।

মনিরামপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম বলেন, টিসিবির কার্ডের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। পৌরসভার গেটে অবরোধের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি।

এসিল্যাণ্ড বলেন, পরে পৌরসভার প্রশাসক এসে বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। কারা টিসিবির পণ্য পাওয়ার যোগ্য সেটা দেখার জন্য ১০ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মনিরামপুর পৌরসভার প্রশাসক ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, সড়ক অবরোধ হয়নি। একসাথে বহু মানুষ চলে আসায় পৌরসভার গেটে ভিড় হয়েছে।

নিজের অপসারণ দাবির বিষয়ে ইউএনও বলেন, পৌরসভার ২ হাজার ৭১২ কার্ডের মধ্যে ২ হাজার ২৯৬ স্মার্টকার্ড তৈরির তালিকা ৫ আগস্টের আগের। এই তালিকা তৈরিতে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

ইউএনও আরও বলেন, স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে আমরা পণ্য দিচ্ছি না। সংশোধিত তালিকায় অনেক ত্রুটি আছে। এই তালিকার পুরটাই সংশোধনের আবেদন করা হবে।

তিনি বলেন, টিসিবির এখন যে পণ্য এসেছে তা বিতরণের জন্য পৌরসভার সব ওয়ার্ডে নতুন করে তালিকা করা হবে।

ছবি : টিসিবির দাবিতে মনিরামপুর পৌরসভার ফটকে অবস্থান নেওয়াদের সরাতে কাজ করছে সেনাবাহিনী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়