স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ‘খবরকে’ কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ‘খবরটি’ বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বিএনপির দলীয় সাবেক এমপি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সেটি প্রকাশ করা হলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়ায় একটি স্থানীয় দৈনিকের লোগো সংবলিত ছবিতে ভাইরাল হওয়া ‘খবরের’ চেহারায় কিছু লেখা ও ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে শিরোনাম টানা হয়েছে, কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজা আহাম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, তার বড় ছেলে আসিফ রেজা শিশির মোল্লা এবং বোনের ছেলে খসরু মোল্লাসহ আরো কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
পত্রিকাটির দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি মো. বাদশাহ্’র বাইনেমে প্রকাশিত ওই ‘খবরে’ অভিযুক্ত বা অভিযোগকারী কোনো ব্যক্তিরই বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি ভুলে ভরা বাক্যে লেখাজুড়ে যেসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে তার কোনো প্রকার প্রকাশ্য বা গোপন সূত্রও উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে প্রতিবেদক মো. বাদশাহ্’র দাবি, তিনি কিছুই জানেন না ‘খবরটির’ বিষয়ে। এ ধরনের কোনো খবরও ওই পত্রিকায় তিনি পাঠাননি। প্রতিবেদককে না জানিয়ে তার নাম ব্যবহার করে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন এবং এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতিবেদক বাদশাহ্কে তারা তোপের মুখে ফেলে দিয়েছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেন।
কুষ্টিয়া-১ আসন দৌলতপুরের বিশাল জনপদে চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং শেষবার প্রতিমন্ত্রী হওয়া এ অঞ্চলের জনপ্রিয় বিএনপি নেতা আহসানুল হক পচা মোল্লার বড় ছেলে রেজা আহাম্মেদ বাচ্চু মোল্লাও ধানের শীষে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। বাচ্চু মোল্লা বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। বাচ্চু মোল্লার বড় ছেলে শিশির মোল্লা ও ভাগনে খসরু মোল্লাও রাজনীতিতে সক্রিয় এবং ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিগত রাজনীতিতে সবধরনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হন এই স্থানীয় রাজনীতিকরা। আগামীর রাজনীতিতে দৌলতপুর উপজেলা বিএনপিকে দুর্বল করতে এসব চক্রান্তমূলক গুজব জনসাধারণের মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের।
দলীয় সূত্র মতে, সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কাল্পনিক তথ্য প্রকাশ করে ভাইরাল করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটি খবর নয়। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মনগড়া এ ধরনের ‘খবর’ ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, নইলে এ ধরনের অপসংস্কৃতি চলতে থাকবে বলে অনেকে মনে করছেন। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দৌলতপুর সাংবাদিক ফোরামের উপদেষ্টা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাহীন বলেন, যারা বস্তুনিষ্ঠতা ছাড়া এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়, পরিবেশ দূষণ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, আমরা এ ধরনের অযাচিত অপেশাদার কথিত সাংবাদিকতার প্রতিবাদ জানাই। পেশাদার নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চা ছড়িয়ে পড়ুক এমনটাই প্রত্যাশা করি।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা বলেন, মূলধারার সাংবাদিকরাই ভালো বুঝবে। এক শ্রেণির সাংবাদিক উদোর ঘাড়ে বুধো চাপিয়ে দেয়। তাদের ছাড় দেয়া হবে না, আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, মিথ্যা খবর প্রকাশের অভিযোগে ভাগজোত এলাকায় জনরোষে পড়েন বাদশাহ্ নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। তাকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাদশাহ্ ভাগজোত সীমান্ত এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে।
কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজা আহাম্মেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, দৌলতপুর অনেক বড় এলাকা, উপজেলাটির আয়তন অনেক জেলার চেয়েও বড়, ভৌগোলিকভাবেও বিচিত্র। হাসিনা সরকারের স্বৈরশাসনের বিদায়ের পর আমরা একটি বড় বাধা পার করেছি, কিন্তু সাংগঠনিক কাজের অনেক চাপ বেড়েছে। আমাদের উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে এমনকি গ্রাম পর্যায়েও নিয়মিত কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো অসাধু ব্যক্তি এই ব্যস্ততার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এখানকার মানুষ, সচেতন সমাজ ওইসব অপচেষ্টা প্রতিহত করবে। কোনো অপপ্রচার কখনো প্রতিষ্ঠা পায় না। পুনরায় যাতে এ ধরনের অপপ্রচার না করা হয় সে জন্য দলের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।