যৌতুক নেই, মোহরানা কম, নগদে পরিশোধ
বিয়ে আপনার, খরচ আমাদের’ স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল চট্টগ্রামে ছিল অন্যরকম এক বিয়ের আসর। বিয়ে করেছেন ১৬ জন বর কনে। নগরীর আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় বর এবং কনেপক্ষের কোনো খরচ ছাড়াই জমকালো আয়োজনে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছে আলহাজ্ব শামসুল হক (অ্যাশ) ফাউন্ডেশন। আগে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এই আসরে সামিল হয়ে বিয়ে করতে বর এবং কনেপক্ষকে মানতে হয়েছে কিছু শর্ত। সেগুলো হলো বিয়েতে কোনো ধরনের যৌতুক নেওয়া যাবে না। একই সাথে অতিরিক্ত মোহরানাও নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি ধার্যকৃত মোহরানা নগদে পরিশোধ করতে হবে। এসব শর্ত পূরণ করেই গতকাল বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৬ জন বর কনের বিয়ে পড়িয়েছেন ইসলামিক স্কলার শায়খ আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। সমাজ থেকে অভিশপ্ত যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত করতেই অ্যাশ ফাউন্ডেশন এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
গতকাল স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজনের মধ্যে ছিল বর ও কনেপক্ষের ১০০ জনের খাবার, বর কনের সাজসজ্জার খরচ, পাশাপাশি ছিল কক্সবাজারে হানিমুনের প্যাকেজ, ঘরের সামগ্রী, বিভিন্ন আইটেমের আট পদের খাবার। খরচ বহন করা হয়েছে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। বিয়ের পরে বর কনেকে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের আয়োজনে অংশ নিতে পেরে বর কনে সবাই উচ্ছ্ধসঢ়;বসিত বলে জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, যৌতুক প্রথা, দেনমোহরের নামে অতিরিক্ত অর্থ, আপ্যায়ন এই বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে সহজ বিয়ের প্রচলন হওয়াটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজকের এই যাত্রা ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসর থেকে সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
একজন বর জানান, এই ধরনের আয়োজন চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে সারা দেশে করা গেলে ভালো হয়।
আরেকজন বর জানান, বিয়েকে সহজ করার জন্য আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন যে আয়োজনটি করেছে তার জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এই আয়োজনটি যৌতুকবিহীন এবং সম্পূর্ণ মোহরানা আদায়ের মাধ্যমে হয়েছে। এই আয়োজনের প্রচারণা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক। সমাজে বিবাহ সহজ হয়ে উঠুক।
আয়োজনের বিষয়ে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে আমি আমার বিয়ের সময় দেখেছি আমার আত্মীয় স্বজন অনেকেই বলেছে যৌতুক নয়, তারা উপহার দেবে। সেই উপহার নিলে ক্ষতি কী? আমি এর সরাসরি ভুক্তভোগী। যৌতুক প্রথা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। এটি নিছক কোনো বিয়ে নয়, এটি একটি আন্দোলন। আমরা যৌতুক প্রথা চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে চাই। একজন বাবা মেয়েকে লালন পালন করে বড় করেন। কিন্তু বিয়ে দেওয়ার সময় তার মুখে হাসি থাকে না। টাকার জন্য আমার আপনার কাছে হাত পাততে হয়। আমার কথা হলো, কোনো বাবা যৌতুকের দায়ে ঋণগ্রস্ত থাকবেন না। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে আবারও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সামনের বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে রংপুর বিভাগে। সেখানে থাকবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।