দায়িত্ব কর্তব্যের অবহেলায় মুকসুদপুর থানা থেকে গ্রেফতারকৃত হত্যা মামলার আসামী হৃদয় শেখ (২২) পলিয়েছে। এ ঘটনায় মুকসুদপুর থানার এক এস আই’সহ দুই জনকে সাময়িক ভাবে বরখাস্থ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান।
মোটা অংকের উৎকোষের বিনিময়ে আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী মামলার বাদী ও তার স্বজনদের। ঘটনাটি গত বুধবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টার সময় ঘটলেও বিষয়টি জানাজানি হয় ওইদিন সন্ধ্যায়। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০২৪ সালে মুকসুদপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত নগরকান্দি উপজেলার দামরদী গ্রামের শাহাআলম মাদবর এর ছেলে ভ্যান চালক আকাশ মাদবর (১৬) কে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হত্যা করে তার সলাশ গুম করে রাখে।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৭ই মে মুকসুদপুর উপজেলার দোয়ারীডাঙ্গা এলাকার একটি পুকুরের কচুরিপানার নীচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মৃত আকাশের পিতা বাদী হয়ে থানা থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি হৃদয় শেখ সহ পাঁচজনকে নামংকিত ও দুই/ তিন জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মুকসুদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এরই প্রেক্ষিতে মামলার ২ নং আসামী হৃদয় শেখ কে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার সময় বাদীর লোকজনের সহযোগিতায় মুকসুদপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আসামিকে ওই রাতে থানার হাজত খানায় রাখা হয়। পরবর্তীতে বুধবার সারাদিন শেষে সন্ধ্যা রাতে জানা যায় হাতকড়া পরা অবস্থায় কোর্টে চালান করার পূর্বেই আসামি হৃদয় শেখ সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের সময় মুকসুদপুর থানা থেকে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি অত্র থানা পুলিশ গোপন রাখার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা জানাজানি হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কোন তথ্য না দিয়ে প্রেস নোট রেডি করছি বলে গড়িমসি’সহ কালক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমানের কাছে এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন ওসি কেন বিষয়টি হাইড করার চেষ্টা করছেন জানিনা। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় মুকসুদপুর থানার এসআই শামীম ও হাজত রক্ষী কনস্টেবল মাহফুজকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া পলাতক আসামী হৃদয় শেখকে দ্রুতম গ্রেফতার করার জন্য মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় মামলার বাদী নিহত ভ্যানচালকের পিতা ও তার মামী রুপা খানম বলেছেন, এ হত্যা মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকেই মুকসুদপুর থানা পুলিশ আমাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে দেখেছেন।
আসামি ধরতে তাদের তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায় না। অনেক কষ্ট করে আমরা মামলার দুই নম্বর আসামি হৃদয় শেখ এর অবস্থান নিশ্চিত করে পুলিশ কে আসামি ধরতে সার্বিক সহযোগিতা করি। এরপরেও গ্রেফতারকৃত সেই আসামী কিভাবে থানার হাজত থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় পালিয়ে যায়। তারা বলেন, আমরা ধারণা করছি এটা অবশ্যই মোটা অংকের উৎকোষ গ্রহণের মাধ্যমে ওই আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পাশাপাশি এই হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আমাদের ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।