তালায় এতিম ও নৈশ প্রহরীদের সরকারি কম্বল বিতরণ

আগের সংবাদ

রামপালে যাত্রাপালা ও জুয়ার আসর বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

পরের সংবাদ

ধ্বংসের পথে যশোরের স্থানীয় যুব সমাজ মাদকে ভাসছে শহরতলীর উপশহর ও বিরামপুর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৫ , ৭:৪০ অপরাহ্ণ আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৫ , ৭:৪৪ অপরাহ্ণ

যশোর সদর উপজেলার শহরতলী এলাকা বিরামপুর ও উপশহর ভাসছে মাদকে। ধ্বংসের পথে স্থানীয় স্কুল পড়ুয়া যুব সমাজ ও শিক্ষার্থীরা।

এই দুই এলাকায় রয়েছে মাদকের অন্তত ৬০টি স্পট। দুই এলাকায় মাদক ব্যবসার ডিলার রয়েছে প্রায় ১৫ জন। আর খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা তার চেয়েও তিনগুণ বেশি। অল্পদিনে ধনী হওয়ার আশায় অনেক তরুণ ও নারীও এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যে সয়লাব হয়ে গেছে এই অঞ্চল।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপশহর ও বিরামপুর এলাকায় প্রায় ৩ হাজার মাদকসেবী রয়েছে, যারা বছরে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকার মাদক গ্রহণ করে। এদিকে মাদকের টাকা জোগাড় করতে তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও খুনের মতো অপরাধে। মাদক ব্যবসা ও সেবন নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও নিয়মিত। অনেকবার মাদকবিরোধী প্রতিবাদ ও অভিযান চালানো হলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে এসব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণত খুচরা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও বড় ডিলাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আপরদিকে মাদক প্রবেশের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ছুটিপুর রোড, চৌগাছা রোড ও বেনাপোল রোড। অভিনব পন্থায় মাদক পৌঁছানো হয় ডিলারদের কাছে। পুলিশের টহল থাকা সত্ত্বেও পণ্যবাহী ট্রাক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান, সংবাদপত্র লেখা মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট কারে মাদক পরিবহন নির্বিঘ্নে চলছে। এছাড়া শিশু-কিশোর ও নারীদেরও এই কাজে ব্যবহার করা হয়।

সূত্র জানায়, বিরামপুর ও উপশহরের বর্তমান মাদক সিন্ডিকেট চালায় কালাম ওরফে কসাই কালাম ও তার ছেলে হালিম। আওয়ামী লীগের সাবেক ক্যাডার মুরগি হাসান, ইসহাকের ছেলে ইব্রাহিম ও আহমদ মিস্ত্রির ছেলে ইব্রাহিম। বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। জানা যায়, এলাকার বড় অংশ রাত নামলেই মাদকসেবীদের ভিড় জমে। উঠতি বয়সের কিশোর ও ছাত্রদের এ ব্যবসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। মাসিক বেতনে নিয়োগকৃত ৩০ জনের মোত সেলসম্যান প্রতি রাতে মাদক বিক্রির হিসাব সিন্ডিকেট নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়।

খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, বিভিন্ন পন্থায় মাদকের চালান এসে জমা হয় মূল ডিলার বিরামপুর গ্রামের কালামের কাছে। পরে কালামের ছেলে হালিমের মাধ্যামে ওই এলাকার কালীতলার মৃত জামালের ছেলে মুরগি হাসান, ইসাকের ছেলে ইব্রাহিম ও আহমদ মিস্ত্রিরির ছেলে ইব্রাহিমের হাত দিয়ে নিয়োগকৃত বিভিন্ন এলাকার স্পট ডিলারের হাতে পৌছে যায়।

এদিকে কালিতলা ও আমতলা স্পট নিয়ন্ত্রণ করে নিরঞ্জনের ছেলে সঞ্জিত, বিরামপুর গুলশান মোড় এরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মাদক ব্যবসায়ী জীবনের ও তার ছোট ভাই রিপন তার সহযোগী হিসাবে কাজ করে আসিফ। ওই এলাকার খালেকের দোকান সহ কাজীপাড়া মোড় সাইকেল এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করে জীবন ও আবির ছেলে শাওন গ্যাং। পাগলাদহ ব্রিজ ও মোস্তফার দোকান এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ইসহাকের ছেলে ইব্রাহিম গ্যাং। বিরামপুর নোয়াখাইলে পাড়া এলাকা মাদক নিয়ন্ত্রণ করে আহমদ মিস্ত্রীর ছেলে ইব্রাহিম। বিরামপুর নদীরপাড় এলাকা মাদক নিয়ন্ত্রণ করে মৃত অনিল মন্ডলের ছেলে অন্তর মণ্ডল। বিরামপুর বরিশাইলাপাড়া নিয়ন্ত্রণ করে টুনটুনির ছেলে আসলাম।

এছাড়া বিরামপুর রাসখোলা এলাকার রবিন দাস, পবিত্র দাসের ছেলে রানা দাস, কালীতলা এলাকার রাশেদ ও দুর্গা বিশ্বাসের ছেলে দীপঙ্কর। এদিকে বছর খানেক আগে রবিন দাসকে ৫‘শ পিস ইয়াবাসহ মাগুরা জেলা পুলিশ আটক করে। যে মামলা এখনো চলমান আছে।

এ সকল মাদক ডিলারদের কাছ থেকে মাসিক বেতনে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল ফেরি করে বিক্রি করে আরো প্রায় ২০জন। প্রতিদিনের হিসাব রাত ৯টার মধ্যে দিতে হয় ডিলারদের কাছে। রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে মাদক বিক্রয়ের সকল টাকা পৌঁছে যায় সিন্ডিকেট প্রধান কালামের ছেলে হালিমের কাছে।

গত ৫ জানুয়ারী বিরামপুর কাজীপাড়া বাবুপাড়া গ্রামের মো. শাহিনুর মোল্লা ওরফে মনিকে ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের সদস্যরা। আটক মনি সাবেক ক্ষমতাশীন দলের নেতা কিয়ামতের ছোট ভাই ও জীবনের চাচা।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, মাশোহারা নিয়ে খোদ প্রশাসন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীরা দেখেও না দেখার ভান করেন। এ সকল মাদক ডিলারদের নামে অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মাদক মামলা থাকা সত্ত্বেও আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় এ মাদক ব্যবসা চালু রেখেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ব্যবসা করে খাচ্ছি চুরি ডাকাতি তো আর করিনা নিয়মিত পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়েই ব্যবসা করছি এই জন্য অভিযান আসার আগেই আমরা জেনে যাই।

সচেতন মহল বলছে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন কঠোর ও ধারাবাহিক মাদকবিরোধী অভিযান। স্থানীয় প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, শিশু-কিশোরদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্কুল ও মাদ্রাসাভিত্তিক কার্যক্রম চালু করতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে একাধিক অভিভাবক জানায়, এসকল এলাকায় যে হারে মাদক ব্যবসা বেড়েছে তাতে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেয়। দ্রুত প্রশাসন যদি হস্তক্ষেপ না করে তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মাদকের দিকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান চলমান আছে। মাদক ব্যবসায়ীরা যেই হোক তাদের কোন ছাড় নেয়। তারা রাষ্ট্র ও যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়