৩১ ডিসেম্বর মুজিববাদের কবর রচিত হবে

আগের সংবাদ

পরিবারকে পাঠানো শেষ মেসেজ ‘বিমানের ডানায় পাখি আটকে আছে’

পরের সংবাদ

গুচ্ছ অনিশ্চিত, দূরত্ব বাড়াচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও উপাচার্যদের

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ , ১:১০ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ , ১:১০ অপরাহ্ণ

ছবি: সংগৃহীত

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের হয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি তুলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা। গুচ্ছ পদ্ধতি জটিল, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও স্বকীয়তা ফেরাতে শিগগির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া উচিত বলেও মত দেন তারা।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা জানান। শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একইপথ অনুসরণ করেছে অথবা করতে চায় আরো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অভিভাবক হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে আহ্বান জানালেও কঠোর হতে পারছে না।

অপরদিকে, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নীরব রয়েছে ইউজিসি। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অধিক পরিমাণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, কারণ তাদের ভর্তির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন কারণে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে অনেক বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে, ক্লাস শুরু হওয়া দেরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করছে।

এছাড়া, গুচ্ছ পদ্ধতিতে মেধা তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ থাকায় দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার ভিত্তিতে যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। তারা দাবি করছেন, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর মানসম্মত শিক্ষার্থীর সংকট, ফাঁকা আসন নিয়ে ক্লাস শুরু, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া, মেধাবিদের ভর্তিতে অনাগ্রহ, স্বকীয়তা হারানো, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী না পাওয়া, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং পরিচিতি ও ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্ষতিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

কেবল শিক্ষক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করাও গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি- গুচ্ছ পদ্ধতি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া একটি ভুল পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর বিষয় সামনে রেখে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে তা কাজে দেয়নি। প্রতি শিক্ষাবর্ষে দেখা যায় ৬-৭ বার মাইগ্রেশন হয় এতে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীকে একাধিকবার ভর্তি ও ভাইভা দিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যেতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থী নিজেও জানে না তার মাইগ্রেশন হয়ে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়েছে। এর ফলে, তিনি তার কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, গুচ্ছ পদ্ধতি বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে। ভালো শিক্ষার্থীরা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন এবং পিছিয়ে পড়ারা মফস্বলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন- যা বিশ্ববদ্যালয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

গুঞ্জন রয়েছে- গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও খাতা একটা নির্দিষ্ট প্রেস থেকে ছাপাতে হয়। যে প্রেস থেকে তা করা হয় সেখান থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্তারা। দীপু মনি এখন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে না থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকা কর্তারা কোনোভাবেই সেই কমিশন নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।

অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ও স্বকীয়তার কথা বললেও বাস্তবে আর্থিকভাবে লাভের কারণেই মূলত আলাদা পরীক্ষা নিতে চায়। কারণ, ভর্তির ফরম বিক্রি বাবদ বিপুল আয়ের বড় অঙ্কই শিক্ষকসহ ভর্তির কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পেয়ে থাকেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যবস্থা অনুসরণ করতে উপাচার্যদের অনুরোধ করেছেন। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু তার অনুরোধ উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন চলমান দূরত্বে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি হচ্ছে, নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা। এছাড়া, শিক্ষক ও কর্মকর্তা কেউ-ই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নয়। সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবার আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে একটা ধারা আছে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। বিগত সময়ে স্বৈরাচারী কায়দায় আমাদের ওপর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য চাপিয়ে দেয়া হয়।

এবার একাডেমিক কাউন্সিলে সবার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, এতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা তাদের নিজস্ব অধিকার। তবে, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বিষয় বিবেচনা করে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিয়ে উপাচার্যদের ‘অনুরোধ’ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়’ শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল বিবেচনা করে এ পদ্ধতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়