শ্যামনগরে ভাই হত্যার বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

আগের সংবাদ

পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসলো ৮১১ কন্টেইনার

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি যেন মাদকের হাট

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চালাতে অনিহা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ , ৭:৪২ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ , ৭:৪২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবি। খুব ভোরে মর্নিং ওয়াকে আসেন নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ।এরপর বাড়তে থাকে সাধারন মানুষের আনাগোনা। স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানূষের পদচারনায় মুখরিত থাকে এই এলাকা।

বিকেল থেকেই এই এলাকায় প্রেমিক যুগল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানূষের আড্ডা জমে উঠে। দূর দূরান্তথেকে বাইকে করে এসেও আড্ডা দেন অনেকে। সন্ধ্যার পর বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যা। কোথাও কোথাও শুনা যায় গলা ছেড়ে গানের সূর। স্বাভাবিক চিত্র এই এলাকার। নিরিবিলি মনোরম এই পরিবেশের রয়েছে ভিন্ন এক চেহারা। আর তা হলো মরনঘাতী মাদকের রমরমা ব্যবসা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাল্টাতে থাকে আগের সেই চিরচেনা চিত্র। গানের আড্ডার পরিবর্তে বিভিন্ন স্পটে বসে মাদকের আসর। কখনো ছোট ছোট গ্রুফ আবার কখনো ১০-২০ জনের বড় গ্রুফ। যেখানে গানের তালে তালে চলে গাঁজার টান। রাত যত বাড়ে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এসব মাদকসেবীদের সংখ্যা। সিআরবির আনাচে-কানাচে বসে মাদকের আসর, লাগে মাদক বিকি কিনির হিড়িক। এ সকল মাদকের মধ্যে রয়েছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ নানা ধরনের ভয়ঙ্কর নেশা দ্রব্য।

তবে এ বিষয়ে ফাঁড়ির পুলিশের কিছু তৎপরতা দেখলেও নজর নেই রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি)। অযুহাত দেন জুরিসডিকশনের। তবে প্রশ্ন এখন রেলওয়ের জায়গার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা দেখার দ্বায়িত্ব কার? প্রশ্ন এখন এসকল ভোক্তাদের যোগানদাতা কে? কিভাবে সহজ লভ্য হলো দুঃষ্প্রাপ্য এই মাদক? পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে ও বিভিন্ন মামলার নথি থেকে উঠে এসেছে সিআরবি ও তার আশেপাশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীর নাম। তারা সিআরবির বিভিন্ন এলাকায় দাপটের সাথে চালায় মাদকের রমরমা ব্যবসা। তাদের মধ্যে সিআরবির তুলাতলী বস্তি এলাকার একাধিক মাদক মামলার আসামি শুক্কুর অন্যতম। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন শুক্কুর। এছাড়াও উঠে আসে সিআরবির আরেক মাদক সম্রাজ্ঞী ও বহু মামলার আসামি আখলিমার নাম।

সম্প্রতি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে লাবু নামে আরও এক মাদক ব্যবসায়ীর নাম। অভিযোগ আছে প্রায় প্রতিদিনই নেশা করে সিআরবি’র সিরিশ-তলা এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এই লাভু। সম্প্রতি সিআরবি’র এই মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর হামলায় আহত হন ইসমাইল নামের এক দোকান মালিক। জানা যায়, এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় মাদক ব্যবসায়ী লাবু। নগরীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক-ছিনতাইসহ মোট নয়টি মামলা আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এতে প্রতিবাদ করলে লাবু ও তার ছেলে ইমন সহ আরো বিশ থেকে ত্রিশজন সন্ত্রাসী সিআরবি’র দোকান-মালিকদের উপর হামলা চালায়। এতে ইসমাইল নামের একজন দোকান মালিক গুরুতর আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ব্যাক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এছাড়াও আহত হন আরো দশজন। এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় ইসমাইল নামের ওই ব্যাক্তি নিজে বাদি হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ভুক্তভোগী মতিন জানান, লাবু সিআরবি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশ প্রশাসনও তার কিছু করতে পারে না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর জানান, সিআরবি সিরিশ তলার পশ্চিম কোনায় লাবু রেলের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে টং দোকানের আড়ালে চালায় মদ-গাজা, ইয়াবার ব্যবসা। এতে তার সাথে শিমলা নামের ১৯-২০ বছর বয়সের এক মেয়েও জড়িত।

সিআরবিতে আরও যারা রয়েছেন! এই সকল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে এরশাদ উল্লাহ ও তার স্ত্রী মমতাজ, মেয়ে ফাতেমা ওরফে পুতু, মেয়ের জামাই মাসুদ ওরফে বাবু মাসুদ মাদকের পাইকারি ডিলার। এই মাদক ব্যবসায়ী পরিবারের কাছ থেকে পাইকারিতে গাঁজা ও ইয়াবা কিনে খুচরায় বিক্রি করেন, আকলিমা ও তার ছেলে-মেয়ে সাথী ও শাকিল, এই পরিবার ছাড়াও আরো আছে কমলা, মনা ও মুন্না (স্বামী স্ত্রী), আলম ও আলমের বউ, ছেলে হাবিব ও সজিব, মানিক ও মানিকের বউ মনি। এদিকে মাদক বিক্রি-কিনার আরেকটি বড় স্পট বয়লার এভিনিউ। ওই স্পটে দাপটের সাথে মাদক বিক্রয় করেন আলো ও আলোর মা হিরুনী। এছাড়াও সিআরবি’র মালীপাড়া বস্তি এলাকায় রয়েছে মদের বিশাল সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেটের প্রধান হর্তাকর্তা বুইদ্দা নামের আরেক মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়াও রয়েছে শাহ আলম, বিপ্লব, কানা বিমল সহ নাম না জানা আরো অনেকেই। এদিকে গোয়াল পাড়া এলাকার মদের বড় ডিলারের তালিকায় রয়েছে রুজন নামের আরেক মাদক ব্যবসায়ী। আরএনবির দ্বায়িত্বে অনিহা? তবে এ ব্যাপারে জানতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইন্সপেক্টর মাসুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব আমার এরিয়া না। কখন কি ঘটেছে আমি কিছুই জানি না। যেসব জায়গা আমার এরিয়া না। কিন্তু রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন বলছে রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য গঠন করা হয়েছে এই বাহিনী।

সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। যারা এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের অনেকেই একাধিক মাদক মামলার আসামি। তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও মাদক ব্যবসায় যুক্ত হয়। তিনি আরও বলেন, যে কোন পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সার্বক্ষনিক প্রস্তুত। প্রশাসনসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের এতো এতো অভিযানের পরও কিভাবে এই জমজমাট মাদক ব্যাবসা চলে তা খতিয়ে দেখার দাবি সচেতন মহলের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়