চট্টগ্রাম বন্দর এবারও ৩০ লাখ ক্লাবে

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছায় ব্যাংক গ্রাহক ৩লাখ টাকা প্রতারণার শিকার তিন প্রতারকের একজন আটক

পরের সংবাদ

নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা টিসিবি পণ্য

চট্টগ্রামে টিসিবি পণ্যের জন্য ভোর থেকে লাইন, মিলছে না চাল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪ , ৮:৩৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০২৪ , ৭:৪০ অপরাহ্ণ

নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনার জন্য বিভিন্ন বয়সী মানুষের দীর্ঘ লাইন। অনেকে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ান। চট্টগ্রাম নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা নাসিমা বেগম টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের সামনে সারিতে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ফজরের নামাজের পর। সকাল ৭টারও অনেক পরে নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য কিনতে পারলেও মেলেনি চাল।

নাসিমা বলেন, এলাকার কয়েকজন মিলে আসছি। একবার বাড়িতে গেছি, পরে আবার আসছি, তেল আর ডাইল নিছি, কিন্তু চাউল নাই। সেখানকার একজন বিক্রয় কর্মীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চাল নাই। তেল আর ডাল আছে। চাল আমাদের দেয় না। যা দেয়, তাই নিয়ে আসি। যতক্ষণ মাল থাকে, আমরা বেচি।”নগরীর চেরাগী পাহাড়ের ঝাউতলার মত চট্টগ্রামের কয়েকটি পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ। পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আগে এসে লাইনে দাঁড়ান কেউ কেউ।

তারপরও সবাই পণ্য কিনতে পারেন না। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ট্রাকে চাল বিক্রি হচ্ছে না। টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলছেন, তারা খাদ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে চাল নিয়ে তারপর বিক্রি করেন। চাল না পাওয়ায় বিক্রিও করতে পারছেন না। তবে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলছেন, চালোর ‘কোনো ঘাটতি নেই’। টিসিবির চাহিদপাত্র পেলে চাল সরবরাহ করতে তারা ‘প্রস্তুত’। নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি হয় সপ্তাহের দুদিন শনি ও মঙ্গলবার; জামালখান মোড়ে বিক্রি হয় সোম ও বৃহস্পতিবার। এরকম নগরীর মোট ২০টি পয়েন্টের প্রতিটিতে সপ্তাহে দুইদিন করে পণ্য বিক্রি করা হয়।

টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানিয়েছেন প্রতিটি পয়েন্টে প্রতিদিন ৪০০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন পণ্য কেনার সুযোগ পান ৮ হাজার মানুষ। আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, “বেশি চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আগে নির্ধারিত প্রতি ট্রাকে ৩৫০ জন ক্রেতার থেকে সংখ্যা বাড়িয়ে এখন ৪০০ ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এখন ডিমান্ড আরো বেশি।”মঙ্গলবার সকালে ১১টায় নির্ধারিত সময়ে চেরাগী পাহাড়ে টিসিবির ট্রাক এসে দাঁড়ানোর পর বিক্রয় কর্মীরা প্রথমে ডাল প্যাকেট করতে শুরু করেন। এ কারণে পণ্য বিক্রি শুরু হয় আরো ৪০ মিনিট পর।

সেখানে সজীব দাশ নামের এক ক্রেতা বলেছেন, বাজারের চেয়ে ট্রাকে তেলের দাম ‘অনেক কম এবং ডালের মানও ভালো’।“এজন্য চার-পাঁচ ঘণ্টা লাইন ধরে হলেও মানুষ কিছু টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু চাল দিচ্ছে না। চাল দিলে আরো ভালো হত।”দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ ফুটপাতে বসে পড়েছেন। কেউ কেউ আবার তার জায়গায় পরিবারের অন্য কাউকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।

সোমবার জামালখান মোড়ে কথা হয় মো. সাইফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আগে ফ্যামিলি কার্ড দেখে জিনিস বেচত। তখন কার্ড ছাড়া কেউ মাল কিনতে পারত না। এখন কার্ড লাগে না। এজন্য লাইন বেশি বড় হয়। তাই সবাই কিনতে পারে না। গাড়ি আসতে মাঝে মাঝে দেরি করে। অনেকে জানে না, কোন দিন গাড়ি আসবে। সেজন্য অন্যদিনও এসে ঘুরে যায়।”দুটি পয়েন্টে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ, গৃহকর্মী, রিকশা ও অটোরিকশা চালক, শ্রমিক, দিনমজুর, দোকানকর্মীর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের কিছু বয়স্ক সদস্যও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। চট্টগ্রামে ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয় ২৪ অক্টোবর থেকে। শুরুতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই কার্যক্রমের সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে ক্রেতা চাহিদা বিবেচনায় এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শুরু থেকে টিসিবির ট্রাক থেকে প্রত্যেক ক্রেতার কাছে ১০০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার তেল, ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল এবং ৩০ টাকা, কেজি দরে ৫ কেজি করে চাল বিক্রি করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কুদ্দুছ।

তিনি বলেন, কিন্তু ১ ডিসেম্বর থেকে টিসিবির ট্রাকে চাল বিক্রি বন্ধ আছে। ”টিসিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা খাদ্য অধিপ্তর থেকে নিয়ে চাল দিই বিক্রির জন্য। চলতি মাসে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা চাল পাইনি। ১০০০ টন চাল বরাদ্দ চেয়ে আমরা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এখনো চাল পাইনি।” অন্যদিকে ‘চালের কোনো সংকট নেই’ দাবি করে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, “পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। টিসিবির কাছ থেকে ডিও (চাহিদাপত্র) পেলে আমরা চাল সরবরাহ করব। কিন্তু এখনো চাহিদা পাইনি। কোথাও একটা মিস ইনফরমেশন হচ্ছে। চাহিদা দিলে আমরা অবশ্যই চাল সরবরাহ করব।”চাহিদা অনুযায়ী ১০০০ টন চাল বরাদ্দ পেলে চট্টগ্রামের ২০টি পয়েন্টে প্রায় এক মাস চাল বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ভাষ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়