বেসরকারিকরণ বাতিলসহ নানা দাবি শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের
চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দেশি বিদেশি মাফিয়ারা চক্রান্তের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা দেশি বিদেশি মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব ও বন্দরের নিরাপত্তা জড়িত। তাই বন্দরকে সকল ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষার জন্য দেশবাসীকে আহ্ধসঢ়;বান জানান তারা।
আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারিকরণ বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার সংবাদ সম্মেলনে তাদের অভিযোগ এবং দাবি তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে দিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। একই সঙ্গে বন্দরকে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার আহ্ধসঢ়;বান জানান।
এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. হারুন। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের চুক্তি বাতিল ও এনসিটি সিসিটিসহ বন্দরের যেকোনো অংশকে প্রাইভেটে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তসলিম উদ্দীন সেলিম।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় আগামী ২২ ডিসেম্বর আমরা বন্দর চেয়ারম্যানকে একটা স্মারকলিপি দেব। এর মধ্যে যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেব।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন। লিখিত বক্তব্যে তসলিম উদ্দীন বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানা কলাকৌশলে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি স্থাপনা তৈরি করে মুনাফা অর্জন করতে পারছে। তাহলে বন্দরের সক্ষমতা থাকার পরেও কেন বন্দর নিজস্ব জনবল ব্যবহার করে রাজস্ব আদায় করে গতিশীল করতে অনীহা যা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। ইতিমধ্যে যে সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হতে চলেছে তাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি না করার অনুরোধ করছি।
তারা বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। ভূরাজনীতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির ৯২ শতাংশ খোলা পণ্য আর ৯৮ শতাংশ কন্টেনার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। শ্রমিক কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চট্টগ্রাম বন্দর আজ সুখ্যাতি লাভ করেছে। প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরের মুনাফা বেড়ে চলেছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়ী থাকবে।
বক্তাদের অভিযোগ, এই বন্দরকে দেশি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য পতিত স্বৈরাচার হাসিনা ও তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে কুক্ষিগত করার জন্য পরিকল্পনা এঁটেছিল। বর্তমানে অন্তর্র্বতী সরকারও একই পথে হাঁটছে।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিসমূহ হলো, বন্দরের ৪৫০০ শূন্য পদে স্বল্প সময়ে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। শ্রম শাখার অন্তর্ভুক্ত সকল শ্রমিক কর্মচারীর দুই মাসের সমপরিমাণ ৬০ ডিউটি গ্র্যাচুইটি দিতে হবে এবং প্রতি মাসে এক হাজার টাকা প্রভিডেন্ড ফান্ড কর্তন করতে হবে। এমইউ চুক্তি মোতাবেক সকল শ্রমিক কর্মচারীর বন্দরের নিজস্ব পরিচয়পত্র দিতে হবে। ক্রেন অপারেটরদের পদমর্যাদা অনুযায়ী গ্র্যাচুইটি নির্ধারণ করতে হবে। সকল স্টিভিডোর স্টাফকে শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এনসিটি সিসিটিতে তিন শিফট ভিত্তিতে ল্যাসিং শ্রমিক বুকিং করতে হবে ও উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুর রহমান মজুমদার ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা ইব্রাহিম খোকন, আবুল কাসেম, মো. ইকবাল, মো. স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান মজু, ইমাম হোসেন খোকন, মো. হাসান, ইব্রাহিম ফরাজি, মো. হোসেন, মো. হাসান, হুমায়ুন কবির, নাজিম উদ্দীন, রাসেল খান রানা, হুমায়ন কবির ফারুক, আবদুর রব, মো. ইউসুফ, মো. পারভেজ, খন্দকার রাজু আহমেদ, মো. জহির, আল ফারুক প্রমুখ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।