ডেঙ্গু ঠেকাতে নতুন ওষুধ আনছে চসিক

আগের সংবাদ

শিক্ষক হেনস্থার প্রতিবাদে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামের রেলওয়ের বাসাগুলো এখন বহিরাগতদের দখলে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪ , ৭:২৯ অপরাহ্ণ আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২৪ , ৭:২৯ অপরাহ্ণ

পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রামের টাইগারপাস ও পাহাড়তলী রেলওয়ে কলোনিতে চার ক্যাটাগরিতে মোট ৫ হাজার ৩২৯টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ২৩৭টি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ২৫৫টি ও চতুর্থ শ্রেণির জন্য ২ হাজার ৬৮৪টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ বাসাতেই থাকেন না রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের স্টাফ কলোনির ১৮ নম্বর ভবনে থাকেন আখতার হোসাইন। রেলওয়ের কর্মচারী না হয়েও গত ১০ বছর রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ কোয়ার্টারই আখতারের ঠিকানা।

তিনি বলেন, ‘দেড় লাখ টাকা জমা দিয়ে বাড়ি নিয়েছি, তাছাড়া মাসে ১৭ হাজার টাকা করে ভাড়া দেই। ‘যার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি তিনি জানিয়েছেন, “কেউ উঠাতে পারবে না। নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন, আমি তো আছি।’ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের স্টাফ কলোনির বেশির ভাগ বাসায় এভাবেই থাকছেন বহিরাগতরা। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার তাদের দখলে রাখা বাসা অন্যদের ভাড়া দিচ্ছেন।

১৫ নাম্বারের বিল্ডিংয়ের এক কর্মচারী অভিযোগের সুরে বলেন, আমরা ফ্যামিলি নিয়ে দীর্ঘদিন এই বাসাই আছি কিন্তু কোনো নিরাপত্তা নেই। সন্ধ্যা হলেই বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যায়, পানি দেয় পাচঁদিনে একবার বিদ্যুৎ ও থাকে না এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই হয়তো আগামি মাসে বাসা ছেড়ে প্রাইভেট বাসায় চলে যাব।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রামের টাইগারপাস ও পাহাড়তলীর রেলওয়ে কলোনিতে চার ক্যাটাগরিতে মোট ৫ হাজার ৩২৯টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ২৩৭টি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ২৫৫টি ও চতুর্থ শ্রেণির জন্য ২ হাজার ৬৮৪টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ বাসাতেই থাকেন না রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নগরীর টাইগারপাসে নেভি কনভেনশন হলের পাশ দিয়ে রেলওয়ে কলোনিতে ঢুকে একটু এগুতেই চোখে পড়ে বাসা ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে দেয়া একটি নম্বরে আজ দুপুরে ফোন করেন প্রতিবেদক।

অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করেন আলমগীর মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তিনি রেলওয়ের স্টাফ নন। রেলের এক কর্মচারীর কাছ থেকে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। সেই বাসা এখন আবার তিনি ভাড়া দেবেন।

টাইগারপাসের কলোনির ১৪ নম্বর ভবনের ১/বি বাসায় পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে আছেন মোরশেদা আকতার। তিনি বলেন, ‘বাপ্পি নামের রেলের এক কর্মচারীর কাছ থেকে বাসাটা ভাড়া নিয়েছি। পাঁচ বছর ধরে এই বাসায় আছি। এর আগেও প্রায় এক যুগের বেশি এই ভবনে ছিলাম, কোনো সমস্যা হয়নি।’ পাহাড়তলী ডিজেল সপের এক কর্মচারীর কাছ থেকে মাসে ১২ হাজার করে ভাড়া নিয়ে ৩ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলার একটি কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকছেন সবজি ব্যবসায়ী মহিন। এর মধ্যে দুইটি কক্ষ আবার সাবলেটও দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি রেলের কর্মচারী ইকরামের আত্মীয়। তবু কোয়ার্টারটা ভাড়া নেয়ার সময় তাকে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে। এসব বাসা ভাড়া দেয়ার সময় ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে এককালীন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে নেন রেলওয়ের কর্মচারীরা। মাসপ্রতি ভাড়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আবার কলোনির আঙিনার খালি জায়গাতেও অবৈধভাবে কাঁচা-পাকা ঘর, দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। সেখানে পানি ও বিদ্যুতের সংযোগও নেয়া হয়েছে অবৈধভাবে।

রেলওয়ে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, এই অঞ্চলের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই বাসা বরাদ্দ নিয়ে সেই বাসা লাখ টাকা সেলামি নিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। অনেকেই কোয়ার্টারের খালি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে উপরি আয় করছেন।

অবৈধ জেনেও সরকারি কোয়ার্টারে বাসা ভাড়া কেন দিচ্ছেন, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের ৫৫ বছর বয়সী এক কর্মচারী বলেন, ‘কোয়ার্টারে সুযোগ সুবিধা তেমন ভালো না তাই। অভিযোগ পাওয়া যায় এই খালি বাসাগুলি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীরা বরাদ্দ নেওয়ার জন্য বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ অফিসে আসলে, খালি থাকলে ও অফিসের অফিস সহকারী রঞ্জিত শীল ও প্রধান সহকারী সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ হয়ে গেছে বলে মিথ্যা তথ্য দেন, পরে কিছু টাকা দিলে বরাদ্দ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। রঞ্জিত শীল ও প্রধান সহকারী সৈয়দ তৈাহিদুল ইসলাম সিন্ডিকেট করে দীর্ঘদিন বিভিন্নজনকে ভুল তথ্য দিয়ে হয়রানি করছেন, এই দুইজন একই দপ্তরে দীর্ঘদিন থাকায় দুর্নীতি করছেন।

পাহাড়তলী ডিজেল সপের কর্মচারী কামাল উদ্দিন বলেন রেলের কর্মচারীরা তাই এসব বাসায় থাকতে চান না। এ জন্য ভাড়া দিয়ে দেন। আমার পাশে অনেকে বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে নিজেরা ভাড়া বাসায় থাকছেন।’

এছাড়াও অভিযোগ পাওয়া যায় আমবাগান কলোনী, ওয়ার্লেস কলোনী, পাহাড়তলী বাজার কলোনী, সেগুনবাগান, পাঞ্জবী লেইন, মাষ্টার লেইন, ডিজেল কলোনী, এক্সইএন কলোনী, টাইগারপাস মাজার কলোনী, ঝাউতলা কলোনীসহ বেশ কিছু খালি বাসা দখল জানালা, দরজা খুলে নিয়ে গিয়েছে এবং সিলকরা কিছু বাসা সিল ভেঙ্গে ভাড়া দিয়েছেন সন্ত্রাসীরা।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ এম রিয়াসাদ ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র এসেছি এই বাসাগুলো নিয়ে সবার সাথে বসে কি করা যায় দেখবো, রেলওয়ের কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ বাসায় বহিরাগতদের থাকার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও কোনো কর্মচারী তার বরাদ্দপ্রাপ্ত বাসায় বহিরাগতদের ভাড়া দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়