বাংলাদেশ স্থলবন্দর চেয়ারম্যানের বেনাপোল বন্দর পরিদর্শন

আগের সংবাদ

চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো প্রভাবশালীদের দখলে

পরের সংবাদ

মাদকের ভয়াবহ বিস্তার, প্রতিদিন কোটি টাকার বেচাকেনা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৪ , ৮:২০ অপরাহ্ণ আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২৪ , ৮:২০ অপরাহ্ণ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় গত কয়েক মাসে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে মাদকের চোরাচালান। পাড়ায় পাড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছুটা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাদক কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে যারা মাদক চোরাচালানে সক্রিয় ছিল সেই চক্রই সুযোগ বুঝে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে উঠছেন বিএনপির লোকজনও। এখানে প্রতিদিন কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, আদাবাড়িয়া ও প্রাগপুর ইউনিয়নের ৪৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভারত সীমানা। এর মধ্যে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকা কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও অবশিষ্ট এলাকাগুলো রয়েছে উন্মুক্ত। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ ও গাঁজা দেশে ঢুকছে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে সীমান্তের গ্রামগুলোতে জড়ো করা হচ্ছে। পরে সেগুলো উপজেলার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এসব মাদক মাইক্রোবাস, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহনে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে। অন্যদিকে সীমান্তের বড় একটি অংশই পদ্মা নদী বেষ্টিত। ফলে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথ দিয়েও সহজেই মাদক পাচার করছে চোরাকারবারিরা।

একাধিক সূত্র মতে, উপজেলার বেশ কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও জনপ্রতিনিধিরাও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন। কিছুটা নিরাপদ হওয়ায় মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দরিদ্র মহিলা ও স্কুল পড়ুয়া শিশুদেরকে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুয়েকটি ছোট চালান আটক করলেও বড় বড় চালান চলে যাচ্ছে কোনো বাধা ছাড়াই। ভৌগলিক অবস্থার কারণে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর ফলে চোরাচালানের মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত অর্ধশত মাদক স্পট রয়েছে। বিশেষ করে প্রাগপুর, ধর্মদহ, চিলমারী, পাকুড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, বিলগাথুয়া, ভাগজোত, চল্লিশপাড়া, জামালপুর, বগমারি. ঠোটারপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, মহিষকুণ্ডি, মরিচা, ফিলিপনগর, আবেদেরঘাট, বৈরাগিরচর, মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, তারাগুনিয়া, কল্যাণপুর, সাদিপুর, বিসিকে, আল্লারদর্গা, রিফায়েতপুর, বড়গাংদিয়া, খলিসাকুণ্ডিসহ বিভিন্ন স্পটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। স্পটগুলোতে রাতের আঁধারে পাইকারি এবং দিনে খুচরা হিসাবে মাদক বিক্রি হয়। ভারতীয় সীমান্তর্বতী এ উপজেলাটিতে প্রতিদিন কোটি টাকার মাদক বেচাকেনা হচ্ছে।

মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সখ্য রেখেই মাদক সিন্ডিকেট তাদের কারবার চালায়। উপজেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনের সাথে জড়িত। এখানে মাদকদ্রব্যের আগ্রাসন এতটাই ভয়াবহ যে, যখন তখন হাত বাড়লেই নির্বিঘ্নে পাওয়া যায়। রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা গোপনে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে আসছেন। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। সরাসরি মাদক কারবারের সাথে যুক্ত থাকাসহ একাধিক মাদক মামলার আসামিও আওয়ামী লীগ দলীয় ক্ষমতায় থাকাকালে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে বিএনপির লোকজনও এখন নতুন করে মাদক কারবারে ঝুঁকে পড়ছেন।

সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসার মূল হোতারা কেউই সরাসরি মাদক বহন করেন না। বহন করার জন্য চুক্তিতে লোক নিয়োগ দেয়া আছে। এ কাজে দরিদ্র মহিলা ও শিশুরাও জড়িত রয়েছে। সীমান্ত এলাকার স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের স্কুল ব্যাগে করেও পাচার করা হচ্ছে মাদক। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি নিরাপদ হওয়ায় অধিকাংশ সময় মেয়েদের এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মাদক বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে।

দৌলতপুর থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আওয়াল কবির বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নজরদারি আগের তুলনায় জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের শতভাগ উদ্যোমে কাজ করার ক্ষেত্রে এখনো কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও মাদককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পারভিন আখতার বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কাজ চলছে। বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে। জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বর্তমানে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়