কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় যুবদল নেতা তরিকুল ইসলাম টুকুকে (৪৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পর সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাতে পাশের জেলা পাবনা সদরের গোবিন্দপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার টুকু দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার মহির উদ্দিন আহমেদের ছেলে। গভীর রাতে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া কোম্পানি কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন লিডার ইলিয়াস খান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে গ্রেপ্তার টুকু হত্যার দায় স্বীকার করেছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার সকালে তাকে দৌলতপুর থানায় সোপর্দ করেছে র্যাব।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিজ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু নিহত হন। এ ঘটনায় পরেরদিন ১ অক্টোবর নিহতের ছেলে আহসান হাবিব বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
স্থানীয় যুবদল নেতা তরিকুল ইসলাম টুকুকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি করে দায়ের করা এ মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলার পলাতক আসামিরা হলেন, দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার সোহাগ হোসেন ওরফে গিট্টু (২২), রওশন (২৩), রাসেল (২৭), লালন (২৬), নাঈম (২২), শামসের আলী গিট্টু (২৩), আল আমিন (২০), হিমেল (২৭) ও ইরাক (৩০)।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার প্রধান আসামি টুকু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মঙ্গলবার দুপুরের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর করা হলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
নিহত নঈম উদ্দিন সেন্টু উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ওই এলাকার মৃত মোতালেব সরকারের ছেলে। সেন্টু চেয়ারম্যান এক সময় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি বিএনপিতে থাকাকালে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সরোয়ার জাহান বাদশাহর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। সবশেষ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, ফিলিপনগর ইউনিয়ন যুবদলের নেতা তরিকুল ইসলাম টুকু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নাজেহালের শিকার হয়ে এলাকা ছেড়ে যান। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হলে এলাকায় ফিরে আসেন টুকু। তিনি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুর সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন টুকু। আগামি ইউপি নির্বাচনে টুকু নিজে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য ঘোষণা দেন।
নিহত নঈম উদ্দিন সেন্টুর পরিবারের দাবি, হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগেও চেয়ারম্যান সেন্টুকে হুমকি দেন ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেয়া তরিকুল ইসলাম টুকু। কিন্তু তার হুমকির এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি চেয়ারম্যান। তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছিলেন। টুকুর পরিকল্পনা অনুযায়ীই চেয়ারম্যানকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেছেন তার পরিবার। চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু দুর্গম চরাঞ্চলে সন্ত্রাসী বাহিনী দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।