কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউএনওর এক অফিস সহকারীর কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ওসমান আলী (৩৫) নামে ওই অফিস সহকারীর চাকরিও হয়েছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। এ কারণে বর্তমানে অনেকটা চুপসে গেলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ওসমানের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। তার বাড়ি দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের পচামাদিয়া গ্রামে। নিজ গ্রামেই কিনেছেন অধিকাংশ জমি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পচামাদিয়া গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম আলীর ছেলে ওসমান আলী ২০১২ সালে অনিয়মের মধ্য দিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন। সে সময় এখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছিলেন অরুণ কুমার মণ্ডল। হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিয়াড় গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে ফুরকি খাতুন অফিস সহকারী পদে চাকরির সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অজ্ঞাত কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দিয়ে ওসমান আলীকে নিয়োগ দেয়া হয়। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ওসমান। তিনি দুই ভাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অপর এক ভাইকে জমিজমা দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। এক সময় কোনোমতে চলতো তাদের জীবন জীবিকা। শূন্য থেকে এখন কোটিপতি ওসমান।
সূত্র মতে, ইউএনওর অফিস সহকারী হিসাবে চাকরি পাওয়ার পর থেকে ওসমানকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এক ইউএনও বদলি হয়ে আরেক ইউএনও আসেন, কিন্তু ওসমানের অবস্থা থাকে সব সময়ই পোয়াবারো। এর আগের ইউএনও আব্দুল জব্বারের আমল ছিল ওসমানের স্বর্ণযুগ। গত তিন-চার বছরের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি জমি ক্রয় করেছেন। তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছেন। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওসমান অনেকটা ডিফেন্ডিং মুডে চলে এসেছেন। মিষ্টি কথার জাদুতে তিনি সবার মন জয়ের মিশন শুরু করেছেন।
অনুসন্ধানী তথ্য মতে, অফিস সহকারী ওসমান আলী তার নিজ এলাকা পচামাদিয়া গ্রামের বিভিন্ন মাঠে ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। এসব জমির মূল্য অন্তত ২৫ লাখ টাকা। পার্শ্ববর্তী এলাকা বোয়ালিয়া ব্রিজ সংলগ্ন বটতলা রাস্তার পাশে ২০ লাখ টাকা মূল্যে কিনেছেন ২ বিঘা জমি। এর উল্টো দিকে রাস্তা সংলগ্ন দেড় বিঘা জমি কিনেছেন ২০ লাখ টাকা মূল্য দিয়ে। শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সরকারি গার্লস কলেজের পার্শ্ববর্তী স্থানে তিনি ৬ কাঠা জমির প্লট কিনেছেন। যার মূল্য অন্তত ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া তিনি নিজ বাড়ির আঙিনায় তৈরি করেছেন গরু খামার। এই খামারে ব্যয় করেছেন ১০ লাখ টাকার ওপরে। এর বাইরে নামে-বেনামে ওসমান আলীর আরো অবৈধ অর্থসম্পদ রয়েছে।
নিজের এত অর্থসম্পদ গড়ার পরেও অর্থলোভী ওসমান তার মায়ের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। অথচ অনেক গরিব অসহায় মানুষ সমাজসেবা দপ্তর থেকে বিভিন্ন ভাতা কার্ড নিতে প্রতিনিয়ত নাজেহালের শিকার হচ্ছেন। অনেক অসহায় মানুষ দিনের পর দিন অফিসে ঘুরেও ভাতা কার্ড প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে ওসমান আলী নিজের মা ছাড়াও তার আত্মীয়স্বজনদের নামে অনায়াসে ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন বলে জানা যায়।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেপরোয়া ওসমান আলী এখন অনেকটাই চুপসে গেছেন। তিনি নিজের অর্থসস্পদ রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছেন, যেখানে যা দরকার তাই দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। আত্মভয়ে কুঁচকে যাওয়া ইউএনওর এই অফিস সহকারীকে ইদানীং অফিস টাইম ছাড়া বাইরে কোথাও দেখা যায় না। ওসমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের অনুসন্ধান চালানো দরকার বলে অনেকে মনে করছেন।
বক্তব্য নেয়ার জন্য দৌলতপুরের ইউএনওর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ওসমান আলীর মুখোমুখি হলে তিনি শুরু থেকেই বারবার কথায় কথায় নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, আমার নামে যেসব বিষয়ের কথা বলছেন সেগুলো সঠিক নয়, অনুগ্রহ করে নিউজ করবেন না। নির্দিষ্ট বেতনে চাকরি করে কোটি টাকার সম্পদ গড়লেন কীভাবে-এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আংশিক সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, নিজে চাষাবাদ করে পরিশ্রম করে জমিজমা কিনেছি। অনিয়ম করে চাকরি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মতিতে আমার চাকরি হয়েছে। রিকোয়েস্ট করছি মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করবেন না।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহর বক্তব্য নিতে কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। অফিস থেকে জানানো হয়, বর্তমানে তিনি ট্রেনিংয়ের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ সময় ইউএনও মো. ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।