যশোর শহর ও শহরতলীতে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এ অভিযানে বিভিন্ন মামলার আসামি এবং নানা অভিযোগে তাদের আটক করা হয়।
যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের কয়েকটি টিমসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মী আটক করা হয়। আটককৃতদের বিএনপি অফিসে ভাংচুর, লুটপাট, বোমা বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বুধবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার পর বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়া বটতলা এলাকার আনিচুর রহমানের ছেলে হুনায়ুন কবির (৫৫), ছোট গোপালপুর গ্রামের মো. মজিদের ছেলে জাকির হোসেন (৪২), উপশহর ১নং সেক্টরের বাসিন্দা আব্দুস সামাদের ছেলে মো. শাহিন (৩৫), পূর্ব বারান্দী বিশ্বাসপাড়ার মৃত আশরাফ আলী বিশ্বাসের ছেলে রবিউল বিশ্বাস (৫৫), ভাতুড়িয়া বাজার এলাকার মৃত তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে আতিয়ার রহমান (৫৬), সদরের করিচিয়া গ্রামের মৃত শাহাদত বিশ্বাসের ছেলে ফিরোজ হোসেন (৫০), মনোহরপুর গ্রামের মোকাম আলী মোল্লার ছেলে শরিফুল মোল্লা (৪৮), কিসমত রাজাপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (৪৫), গাওঘরা গ্রামের মৃত বাবলুর রহমানের ছেলে জাহিদুর রহমান বাচ্চু (৩৫), রামনগর গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের ছেলে ওসামা বিন ইব্রাহিম (২২), গাইদগাছি গ্রামের মৃত সাত্তার মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (৪২), হার্টবিলা (জামতলা) গ্রামের মৃত তাইজুল মোল্যার ছেলে রওশন আলী (৫০) ও আব্দুলপুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আনিছুর রহমান (৪৬)।
যশোর শহরের কাজীপাড়া, পুরাতন কসবা, পোস্ট অফিসপাড়া বারান্দিপাড়া, সিটি কলেজপাড়া, চাঁচড়া রায়পাড়া, বিরামপুর, উপশহর, খোলাডাঙ্গা, ধর্মতলা, পালবাড়ি, লোন অফিসপাড়া, ষষ্টিতলাপাড়া, শংকরপুর, রেলগেট, মুজিবসড়ক, নীলগঞ্জ, ঝুমঝুমপুর, ঘোপ জেল রোড, বেজপাড়া, আরএন রোড, খড়কী, কারবালা এলাকাসহ কয়েকটি স্পটের নেতাকর্মীর বাড়িতে অভিযান পারিচালিত করে তাদের আটক করা হয়।
আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর যশোরের অনেক নেতকর্মী গা ঢাকা দিয়ে আছেন, আবার অনেকে পুরোনো অনেক ঘটনায় করা নতুন মামলায় আসামি হয়েছেন। আর যারা সাধারণ নেতাকর্মী তারা নানা শংকা নিয়ে এলাকায় ও বাড়িতে অবস্থা করছেন।
পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, যশোর শহর ও শহরতলীতে অন্তত ৪টি কিশোর গ্যাং তৎপর রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী, মাদক ও অস্ত্র কারবারী রয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকের ছত্রছায়ায় এসব গ্যাং পরিচালিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচাজ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিভিন্ন মামলার আসামি আটক ও অপরাধী সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন মামলার আসামি ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী ঘরানার ১৩ জন নেতাকমীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেটগুলোর দিকেও নজরদারি করছে পুলিশ। সুনিদিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধী আটক করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীসহ সব ধরণের অপরাধী আটক ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্নস্থানে থানা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশি মুভমেন্ট কমে যায়। আর বিগত দু’মাস যশোর পুলিশও কার্যকরিভাবে মাঠে না থাকার সুযোগ নিয়ে অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত জোরেসোরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল বিভিন্ন মামলার আসামি, অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর সদস্যরা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা চলমান পরিস্থিতে পুলিশের অপরাধ বিরোধী অভিযান কমে যাওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এরই ফল সরুপ ১ অক্টোবর রাতে যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।