রূপান্তর প্রতিদিন-এ সংবাদ প্রকাশের জের
রূপান্তর প্রতিদিন এ সংবাদ প্রকাশের জেরে অবশেষে নড়ে চড়ে বসেছে যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ। এরআগে গত মঙ্গলবার ‘আর কত মৃত্যু হলে দেশ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের জেরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থিত দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে আজ সকালে এই অভিযান পরিচালনা করেন, সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম।
অভিযানে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারের ক্রুটি থাকার কারণে তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সাথে সাথে ভূয়া চিকিৎসকের মাধ্যমে অপারেশন পরিচালনা করে প্রসূতি মৃত্যুর এই ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামি ৭ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নিহতের স্বামী শ্রাবণ ইসলাম ও পিতা হামিদুল ইসলাম বলেন, ভূল চিকিৎসার কারণে তাদের রোগী মারা গেছেন। ছোট নব জাতক বাচ্চাটি মাতৃহারা। রোগী মারা যাওয়ার পর নানা ভাবে তাদের হাত করার চেষ্টা করেছে ক্লিনিকটি। পরবর্তীতে কোনো ভাবে তারা মেনেজ না হলে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও ক্ষতি পূরণ দাবি করেছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের অন্যতম নেতা রাশেদ খান বলেন, তারা জানতে পারে প্রসূতি মৃত্যুও ঘটনায় ক্লিনিক মালিক পক্ষ্য নিহতের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছে। পরবর্তীতে তারা বিষয়টি জেলার সিভিল সার্জন কর্মকর্তাকে জানান। সিভিল সার্জন ক্লিনিকটির ওটি সিলগালা করেছে এবং তাদের ক্ষতি পূরণ সহ নায্য বিচারের অশ্বাস দিয়েছেন।
জেলার সিভিল সার্জন মাহমুদ হাসান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান করা হয়েছে। তাদের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের নায্য বিচার ও ক্লিনিকটির অনিয়মের বিরুদ্ধে সকল ধরণের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযান পরিচালনার সময় সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসানের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন, মেডিকেল অফিসার রেহেনেওয়াজ, অনুপম দাস প্রমুখ।
উল্লেখ্য, যশোর ২৫০ শয্য বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালের সামনেই দীর্ঘ দিন ধরে দালার মারফতে সিজারিয়ানের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে ১০ বেডের এই ক্লিনিকটি। স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও নামধারী সাংবাদিক মেনেজ করে এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন ক্লিনিকের মালিক পক্ষ। নানা অনিয়ম, ভূল চিকিৎসার অভিযোগ থাকলেও জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
সবশেষ ক্লিনিকটিতে গেল সপ্তাহের মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শহরের ধর্মতলার কদমতলা এলাকার শ্রাবণ ইসলামের স্ত্রী অনন্যা রহমান বৃষ্টিকে ১০ হাজার টাকায় সিজারের জন্য দালালের মাধ্যমে চুক্তি করে। চুক্তি মারফত সিজার সম্পন্ন করা হলেও রোগীর শরীরে নানা জটিলতা দেখা যায়। সিজার করেন শান্তা ইসলাম নামে এক অদক্ষ চিকিৎসক। সিজারের দুই দিন পর বৃহস্পতিবার প্রসূতির অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা রেফার্ড করা হয়। পরে তাকে খুলনা গাজী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার শরীরের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জানান, অস্ত্রোপচারকালে তার প্রসাবের নাড়ীতে রক্ত জমে যায়। জমাট বাধা রক্তের কারণে তার প্রসাব বন্ধ হয়ে দুই কিডনি বিকল হয়ে যায়। এরপর ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু সেখানে আইসিইউ ইউনিটে জায়গা না হওয়ায় তাকে ধানমন্ডির ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। গত রবিবার বেলা ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।