আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় প্রায় ৪শ’ অস্ত্রের কোনো হদিস নেই। এর মধ্যে মন্ত্রী এমপিসহ বহু প্রভাবশালী মানুষও রয়েছেন, যারা অস্ত্র জমা দেননি। সরকার ইতোমধ্যে সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে সেগুলো জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনো চারশ’ অস্ত্র জমা হয়নি। এসব অস্ত্রকে এখনো অবৈধ বলা যাবে না বলে উল্লেখ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। তারা আইনি নজরদারিতে থাকবেন।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ।
অভিযোগ রয়েছে, এই সময় দলীয় বিবেচনায় অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। ওই সময়কালে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ১ হাজার ৭৬১ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এদের মধ্যে মন্ত্রী, এমপিসহ প্রভাবশালী বহু রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বেসামরিক লোকজন রয়েছেন। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার গঠনের কয়েকদিন পরই সাড়ে ১৫ বছরে বেসামরিক ব্যক্তিদের দেয়া অস্ত্রের লাইসেন্স
স্থগিত করে অস্ত্রগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর এসব অস্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দিনগুলোতে বহু অস্ত্র জমা দেয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন জেলাসমূহের মধ্যে চট্টগ্রামে ৭৩১টি অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ৬২৪টি, কক্সবাজারে ২০৫টির মধ্যে জমা দেয়া হয়েছে ৯১টি, রাঙামাটিতে ১২৮টির মধ্যে ১১৯টি, খাগড়াছড়িতে ৮টির মধ্যে ৮টি, বান্দরবানে ৩২টির মধ্যে ৩১টি, ফেনীতে ১৭১টির মধ্যে জমা দেয়া হয়েছে ১১৯টি, নোয়াখালীতে ৭৬টির মধ্যে জমা দেয়া হয়েছে ৫৭টি, লক্ষ্মীপুরে ৩৪টির মধ্যে জমা দেয়া হয়েছে ৩৩টি, কুমিল্লায় ২৮০টির মধ্যে ১৪৮টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৩টির মধ্যে দেয়া হয়েছে ৫৯, চাঁদপুরে ১০৫টির মধ্যে দেয়া হয়েছে ৭৩টি। সব মিলে সর্বমোট ১ হাজার ৭৬১টি অস্ত্রের মধ্যে ১ হাজার ৩৬২টি জমা দেয়া হয়েছে। ৩৯৯টি অস্ত্রের কোনো হদিশ নেই।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের বহু মন্ত্রী এমপিও অস্ত্র জমা দেননি বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে, সরকার পতনের পর মন্ত্রী এমপিদের সকলেই গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এরা তাদের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্রগুলো জমা দিতে পারেন নি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, আমরা যেসব অস্ত্র জমা পেয়েছি, এর বাইরেও অস্ত্র জমা দেয়া হতে পারে। কেউ কেউ ঢাকায় কিংবা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পুলিশের কাছে অস্ত্র জমা দিয়েছেন। সব তথ্যগুলো পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে। তবে যেসব অস্ত্র জমা দেয়া হয়নি সেগুলোকে এখনো অবৈধ অস্ত্র বলা যাবে না। এগুলোর ব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।