আবারো দেলুটির ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত

আগের সংবাদ

সাংবাদিক আব্দুল আলীমের মৃত্যুতে মণিরামপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের শোক প্রকাশ

পরের সংবাদ

ইবি দোকানিদের হা-হুতাশ!

৮ লক্ষ টাকা বাকি খেয়ে উধাও ছাত্রলীগ!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ , ৭:৪১ অপরাহ্ণ আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ , ৭:৪১ অপরাহ্ণ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলের ডাইনিং ও বিভিন্ন দোকানে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার বাকি খেয়ে উধাও হয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর প্রায় অর্ধেকই চা-সিগারেট বাবদ এবং বাকিটা হোটেল ও ডাইনিংয়ের। পাঁচটি ছাত্র হল, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তর ও প্রধান ফটকের অন্তত ৩০টি দোকানের বাকির হিসাব থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সময় চা’য়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মুদি দোকান থেকে তারা টাকা পরিশোধ না করে প্রভাব ও হুমকি দিয়ে বকেয়া রাখেন বলে অভিযোগ পাওনাদারদের। সম্প্রতি অনুসন্ধানে শতাধিক নেতা-কর্মীর নামের তালিকা পাওয়া গেছে। ক্ষমতায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা না বলতে পারলেও এখন সবাই মুখ খুলছেন। বাকি টাকা আদায়ে দ্বারে-দ্বারে ধর্ণা দিয়ে বকেয়া টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি তুলছেন। সহযোগিতা চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হল ডাইনিং, খাবার হোটেল ও অন্য দোকানগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মোট বাকির পরিমান ৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫২ টাকা। এরমধ্যে চা-সিগারেটের দোকানে বাকি ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪৫২টাকা এবং ডাইনিং ও খাবার হোটেলে বাকি ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬০০টাকা। ছাত্রদের পাঁচটি হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় মোট বাকি ১ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা। এরমধ্যে জিয়াউর রহমান হলে ৬০ হাজার ও লালন শাহ হলে ৩০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। হলগুলোর ডাইনিং ম্যানেজাররা তাদের বকেয়া খাতা হিসাব করে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরের ও প্রধান ফটকের মোট ছয়টি খাবার হোটেলে মোট বাকি ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৬০০ টাকা। এরমধ্যে ক্যাম্পাসের ভাই ভাই হোটেলে দেড় লক্ষ ও প্রধান ফটকের সামনের ইবি স্ন্যাকসে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বাকি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। এদিকে, ক্যাম্পাস ও প্রধান ফটকের চা-দোকানসহ অন্যান্য অন্তত ২৫টি দোকানে মোট বাকির পরিমান ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪৫২টাকা। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বাকি অভি ক্যাফেতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৯০ টাকা। এসব দোকানের বাকীর প্রায় সবই চা ও সিগারেট বাবদ।

জানা যায়, হাসিনা সরকারের দেশত্যাগের আগেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হল ত্যাগ করেন। তারপর আর কেউ হলে ফিরেননি। অধিকাংশের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। কেউ-কেউ ফোন খোলা রাখলেও পাওনাদরদের ফোন রিসিভ করছেন না। যোগাযোগ করতে না পেরে হা-হুতাস করছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। স্বল্প মূলধনের অর্ধাংশ কিংবা তার চেয়ে বেশি বাকি থাকায় ব্যবসা চালু রাখতে মারাত্মক চাপে পড়েছেন তারা। কেউ-কেউ মোটা অঙ্কের বাকির বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পরবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। কেউ নিজের হোটেল মালিকানা বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে এখন অন্যের হোটেলের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পাসের পুরোনো ব্যবসায়ী ভাই ভাই হোটেলের মালিক আফজাল হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘জমি বিক্রি করে হোটেল চালু করেছিলাম। ছাত্রলীগের বাকির চাপে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা বাদ দিয়ে এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করি। তাদের কাছে দেড় লক্ষ টাকা বাকি, আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তাদের বিচার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি।’

ইবি স্ন্যাকস রেস্টুরেন্টের পরিচালক এনামুল কবির বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা বিগত ১৫ বছর ধরে আমার কাছে ২ লক্ষাধিক টাকা বাকি খেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় একসময় ক্ষোভে হিসাব রাখা ছেড়ে দেই। এখন আমাকে লোন নিয়ে দোকান চালু করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

লক্ষাধিক টাকা বয়েকা থাকা অভি ক্যাফে শপের মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার দোকান থেকে চা-সিগারেটই বেশি খেত। টাকা চাইলে ক্যাম্পাসে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে জোর করে নিজের ইচ্ছামতো সিগারেট নিয়ে চলে যেত।’

সার্বিক বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘লেনদেন সকলের জন্যই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এজন্য ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে যে কারো বাকি থাকতে পারে। আমার আহ্বান থাকবে ছাত্রলীগের কর্মীদের যদি কারো দোকানে বাকি থাকে তাহলে মানবিক দিক বিবেচনায় তারা যেন টাকা পরিশোধ করে দেয়।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়