কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি পরিবারের সদস্যরা জীবনে প্রথমবারের মতো রোজা পালন করছেন। যাদের আগে কখনো সেহেরি খাওয়া হয়নি, রোজা রাখা হয়নি, ইফতার করা হয়নি, হয়নি নামাজের সুযোগও। সময়ের ফেরে এখন সবই করছেন তারা। গত বছর রোজার সময় পরিবারটি ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী। কিন্তু ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মাস সাতেক আগে তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এ বছর তারা রোজা রাখছেন, ধর্মীয় বিধান মেনে নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন। এর আগে রোজার অভিজ্ঞতা না থাকলেও রোজা পালন করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে পরিবারটির সদস্যরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী বাজুডাঙ্গা এলাকার কানু দাস (৫৯) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত বছরের ৭ আগস্ট কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কানু দাসের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হয় মো. আব্দুর রহমান ও তার স্ত্রী রাণী দাসের নাম রাখা হয় মোছা. আমেনা খাতুন। তাদের বড় ছেলে নবকুমার দাসের নাম পরিবর্তন করে মো. ইব্রাহিম, ছেলের স্ত্রী গীতা রাণীর নাম মোছা, সারাহ খাতুন, বড় নাতি অপূর্ব কুমার দাসের নাম মো. ইউসুফ, ছোট নাতি অরবিন্দু কুমার দাসের নাম মো. ইয়াকুব রাখা হয়।
দৌলতপুর থানা বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ হোসাইনকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার কাছ থেকে কালেমা পাঠ করে কানু দাসের পরিবারের সব সদস্য স্বপ্রণোদিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পুরো পরিবার ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ঘটনাটি নিয়ে সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ায় সারাদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মুসলমানদের দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত হন নওমুসলিম পরিবারটি।
এর আগে ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল ওই পরিবারের ছোট ছেলে প্রেম কুমার দাস একাই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। রাজধানী ঢাকার নবাবগঞ্জে এক ইমামের কাছ থেকে কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর এফিডেভিটের মাধ্যমে তার নাম রাখা হয় আব্দুল্লাহ আল সাঈদ। তিনি রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে উপজেলার অাল্লারদর্গা শিল্প এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়ছেন।
স্বপ্রণোদিত হয়ে ধর্মান্তরিত পরিবারটির বড় ছেলে মো. ইব্রাহিম জানান, জীবনের প্রথম রোজা পালন করতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে লম্বা সময় ধরে তারাবি নামাজ পড়তে কিছুটা অসুবিধা হলেও অাস্তেধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইব্রাহিম বলেন- বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্র ও ছোট ভাই মিলে পরিবারের ছয় সদস্য রোজা পালন করছি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি। ছোট ছেলে মাঝেমধ্যে মসজিদে নামাজে এলেও রোজা রাখার মতো বয়স হয়নি, বয়স হলে পড়ালেখার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধান অনুসারে তাকেও নামাজ-রোজায় উৎসাহিত করব। সারাদিন রোজা রাখার পরে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করার মধ্যে অন্য রকম এক প্রশান্তি অনুভূত হয়। যা সত্যিই খুব ভালো লাগে। ইনশাল্লাহ সবগুলো রোজা করার পর জীবনের প্রথম ঈদে আমরা অনেক আনন্দ করব।
নওমুসলিম পরিবারপ্রধান আব্দুর রহমান বলেন- কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়, ইসলাম ধর্মের বিধিবিধানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আত্মউপলব্ধির জায়গা থেকে স্বপ্রণোদিতভাবে আমরা পরিবারের সবাই শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছি। বছর দুয়েক আগে ধর্মান্তরিত হওয়া ছোট ছেলের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জেনেশুনে আমরা এই ধর্ম গ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। এরপর যথাযথভাবে ধর্মীয় ও আইনি নিয়মকানুন অনুসরণ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এ বছর আমরা জীবনের প্রথম রোজা পালন করছি।
আব্দুর রহমান জানান, পরিবারের সাত সদস্যের মধ্যে ৭ বছর বয়সী তার ছোট নাতি ছাড়া অন্য সবাই রোজা রাখছেন। অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও রোজা পালন করতে তাদের কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। এছাড়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দিন থেকেই পরিবারের সদস্যরা সবাই নিয়মিত নামাজ আদায় করে আসছেন। সঠিকভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে যারা সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, রূপান্তর প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।